‘৭১ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছি’-অপারেশন সার্চলাইট’ নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকা শহরে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতার প্রযোজনায় প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী। ৭৩ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল’।
স্টাফ রিপোর্টার : সাহিত্য ও ইতিহাস চর্চা না করায় দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে নিয়ে নির্মিত ‘জ্যোতির্ময়: দ্য প্রফেসর’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন। বুধবার ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এই প্রদর্শনী হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকা শহরে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতার প্রযোজনায় প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী। ৭৩ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রের তত্ত্বাবধানে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অংশ। এই শহীদদের আমরা ভুলে যেতে চাচ্ছি। যদি শহীদদের ভুলে যাই, আমরা দুর্বল হব তাই নয়, কৃতঘ্ন হব। সেই কাজটা ঘটছে। আমরা ক্রমাগত ওই স্মৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তার একটা বড় কারণ হচ্ছে, আমরা ইতিহাস চর্চা করছি না। ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা সব মানুষের জন্য অপরিহার্য।’
শহীদদের ভুলে না যাওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রামাণ্যচিত্র অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের চর্চা দেশে কমে যাচ্ছে বিধায় স্মৃতিকে শক্তিতে পরিণত করতে পারছি না, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক ও ক্ষতিকর।’
কেবল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নয়, বাঙালির মুক্তির যে দীর্ঘ সংগ্রাম রয়েছে, এর জন্যও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো সংগ্রহশালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার ছাত্র ছিলেন এবং পরে সহকর্মী হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলাম, এর অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন যে শিক্ষকেরা তাদের মধ্যে প্রধানতম ছিলেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। মুক্তি নামে একটি পত্রিকা করতেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা এবং এই মুক্তি সংগ্রামেই তিনি শহীদ হন।’
স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন চলচ্চিত্রনির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলন। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয় বলে জানান তিনি।
গত শতকের চল্লিশ ও ষাটের দশকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা। তিনি বলেন, এই সময়টায় যে ইতিহাস লেখা হয়েছে, তা একধরনের জাতীয়তাবাদী ও রাষ্ট্রীয় ইতিহাস। সামাজিক ইতিহাস সেভাবে আসেনি, এলেও তা খণ্ড খণ্ডভাবে এসেছে। এই ধরনের একটা চিন্তা থেকে বাবার (জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা) বায়োগ্রাফি করার কথা ভাবেন। ফলে এটি শুধু একজন ব্যক্তির জীবনী নয়, দেশ ও সমাজের জীবনীও।গুহঠাকুরতা পরিবারের পক্ষে কৃষ্ণা দত্ত ও প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতা সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।