• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

৭১’ খলনায়ক মীর কাশেমের দাফন যেভাবে সম্পন্ন হলো


প্রকাশিত: ৯:৫৩ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৫ বার

হরিরামপুর থেকে সাইফুল বারী মাসুম  :  ৭১’ খলনায়ক মীর কাশেমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে mirkasem kabor-www.jatirkhantha.com.bdতিনটায়।স্থানীয় থানা পুলিশ জাতিরকন্ঠকে জানায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের নিজ বাড়িতে রাত ৩.৩০ মিনিটে মীর কাসেম আলীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।  এসময় তার পরিবারের ৪০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রাত ১২.৩২ মিনিটে কাসিমপুর কারাগার sথেকে মীর কাসেমের লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৭টি গাড়ির বহর রাত ২.৪৫ মিনিটে চালা গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এসময় মীর কাসেমের স্বজনদের কেউ কেউ লাশের কাছে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে লাশের কাছে যেতে দেননি।

জানাজার পর পরিবারের উপস্থিত সকল সদস্যকে লাশ দেখানো হয়। এরপর জানাজা পড়ান স্থানীয় বাহমাদিয়া সুলতানিয়া সামশুল উলুম হাফেজিয়া ও এতিম খানা মাদ্রাসার হুজুর হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদের। মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যরা জানাজায় অংশ গ্রহণ করেন। এরপর লাশ দাফন করা হয়। সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়।হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামে প্রায় ২০ বছর আগে মীর কাসেম প্রায় ৭০ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। নিজের অর্থে নির্মাণ করেন একটি দোতলা মসজিদ। মসজিদের আঙিনার উত্তর পাশে লেবু আর কলা বাগান। পাশেই বাঁশ ঝাড়। তার কাছেই সমাহিত করা হয় মীর কাসেম আলীকে।

রাত সাড়ে এগারোটার  দিকে চালার পাশ্ববর্তী সাকুচিয়া গ্রামের সত্তর বছর বয়স্ক সামেজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাঁচ জন লোক কবর তৈরি করেন। এর আগেও সামেজ উদ্দিন একাধিক কবর খুড়েছেন। তবে একবরটি তার জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার। সামেজ উদ্দিন জানান, যাকে এই কবরে দাফন করা হবে, তার কোনও নিকটতম আত্মীয় স্বজন কবরের পাশে দেখছেন না। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ছাড়া ওই গ্রামের কোনও মানুষও আসেনি।

রাত ১১টার পর চালা গ্রামে..
রাত এগারোটার পরে মানিকগঞ্জ থেকে হরিরামপুর সড়কে প্রায় সব ধরনের যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মী  বিকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চালা গ্রামের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করলেও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ তারা ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে চলে যেতে বাধ্য হন। এসময় চালা গ্রামে বিরাজ করছিল সুনসান নীরবতা।

সাংবাদিকরাও নিষিদ্ধ চালা গ্রামে..

শনিবার রাতে সাংবাদিকরাও নিষিদ্ধ ছিল চালা গ্রামে। ওপরের নির্দেশের কথা বলে মানিকগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ,ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইনের কোনও সাংবাদিককে চালা গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিপিএম সাংবাদিকদের জানান, হাই কমান্ড থেকে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায়  ছয় কিলোমিটার দূরে কলতা বাজার এলাকায় সাংবাদিকদের বহনকারী মাইক্রোবাস ও হোন্ডা আটকে দেওয়া হয়।

আটকে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকন্ঠ ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি গোলাম ছারোয়ার ছানু জানান, পুলিশ সুপার তাদের জানিয়েছেন, হাই কমান্ড থেকে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহে অনুমতি না থাকায় তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চালা গ্রামে মীর কাশেমের ৪০ আত্মীয়..

কেন্দ্রীয় কারাগারে জীবিত মীর কাসেম আলীর সাথে শেষ দেখা করে স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই পুত্রবধূসহ পরিবারের নিকটতম ৪০ সদস্য মীর কাসেমকে দাফন করতে সরাসরি আসেন মানিকগঞ্জের  হরিরামপুরের চালা গ্রামে। মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা, ছেলে, দুই মেয়ে,দুই পুত্রবধূসহ হরিামপুরের চালা গ্রামের উদ্দেশ্যে আসেন পাঁচটি মাইক্রোবাসে করে।

কিন্তু পথিমধ্যে হরিরামপুরের  কলতা বাজার এলাকায় তাদের বহরের গাড়িগুলো আটকে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, হাই কমান্ড থেকে তিনটি গাড়ি ঘটনাস্থলে ঢোকার অনুমতি তাদের কাছে রয়েছে। পরে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুনের অনুরোধে একটি গাড়ি বাদে চারটি গাড়িতে ওই চল্লিশ জন সদস্য রাত এগারোটার দিকে চালা গ্রামে পৌঁছান।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘মীর কাসেমের নিকটতম আত্মীয়রা চালা গ্রামে এসে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন নারী ও ত্রিশ জন পুরুষ সদস্য রয়েছেন।’

চালায় বিপুল নিরাপত্তা..

সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মানিকগঞ্জের গোলড়া, মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড এলাকা, তরা ব্রিজসহ হরিরামপুরে প্রবেশ পথের প্রতিটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটিলিয়ানসহ  প্রায় তিন শ’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ‘মীর কাসেম আলীর লাশ দাফনে যাতে কোনও প্রতিবন্ধকতা না হয়, সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা  ব্যবস্থা নেওয়া হয়।