• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

৬ ইন্সপেক্টরের বয়লার পরিদর্শন তেলেসমাতি


প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১১ বার

এস রহমান  :  সারা দেশে শিল্প কারখানার ৬ ইন্সপেক্টর নিয়ে তোলপাড় চলছে। ট্যাম্পাকো কারখানায় রহস্যজনক 1বিস্ফোরণের নেপথ্যে বয়লার বিস্ফোরণ না অন্য কিছু তা খতিয়ে গিয়ে বয়লার পরিদর্শকদের ক্রিয়াকলাপ উদঘাটন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে মাত্র ৬ জন বয়লার পরিদর্শক কর্মরত রয়েছেন।অভিযোগ উঠেছে, লোকসল্পতা নিয়ে সময়মত পরিদর্শকরা বয়লার পরিদর্শন করতে পারেন না।ফলে ত্রুটিপূর্ণ বয়লার চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।অভিযোগ রয়েছে, সুবিধা নিয়ে যেনতেনভাবে বয়লার পরিদর্শন রিপোর্ট দেয়া হয়।
4
দেশের শিল্প কারখানাগুলোয় কমপক্ষে সাড়ে পাঁচহাজার নিবন্ধিত বয়লার রয়েছে। বিভিন্ন ত্রুটির কারণে প্রায়ই এসব বয়লারে দুর্ঘটনা ঘটে। এসব বয়লারের মান দেখার দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শন বিভাগের। অথচ সারাদেশে বয়লার পরিদর্শনের জন্য মাত্র ছয়জন পরিদর্শক রয়েছেন। এই বিভাগে গত কয়েকবছর ধরে জনবল চেয়েও পায়নি কর্তৃপক্ষ।গত শনিবার টঙ্গীর বিসিক নগরীতে টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণের পর বয়লারের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। যদিও ওই কারখানার বিস্ফোরণের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শন বিভাগের প্রধান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান জাতিরকন্ঠকে বলেন, টাম্পাকোর কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি।বিস্ফোরন কি কারণে ঘটেছে তা উদঘাটনে একটি কমিটি কাজ করছে।কমিটির রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘সারাদেশে সাড়ে পাঁচহাজারের মতো নিবন্ধিত বয়লার রয়েছে। আমরা ছয়জন পরিদর্শক কারখানাগুলো পরিদর্শন করে থাকি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একজন ও রাজশাহীতে একজন পরিদর্শক কাজ করেন। বাকি চারজন ঢাকাতেই আছি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এ কাঠামোয় ২০১০ সালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পরিদর্শকের পদ আছে মাত্র ১০টি, তার মধ্যে আবার ৪টি শূন্যপদ।’

সাড়ে পাঁচহাজার বয়লার কিভাবে ছয়জনে পরিদর্শন করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আসলে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ছয়জনকেই করতে হচ্ছে। এক দিনে ৯-১০টি বয়লার পরিদর্শন করতে হয়। আমরা জনবলের জন্য গত মার্চ মাসে একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। সেই আবেদনটি বর্তমানে শিল্পমন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখানে সাড়ে তিনশ কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৯০ জন পরিদর্শক রয়েছে। আশাকরি শিগগিরই এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’

বয়লার পরিদর্শন বিভাগ থেকে জানা গেছে, বয়লারের মেয়াদ সর্বোচ্চ একবছর করে নবায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ মেয়াদ ফুরানোর আগে না জানালে তদারকি করাও মুশকিল হয়। মেয়াদউর্ত্তীন বয়লার ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ দশহাজার এবং সর্বনিম্ন দুইহাজার টাকা জরিমানা করা যায়।

আগুণ নেভানোর কাজে সহায়তা করছেন সাধারণ মানুষ বয়লার পরিচালনার জন্য অপারেটরদেরও সনদ দিয়ে থাকে এই বিভাগটি। পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সনদ দেওয়া হয়। কোনও শিক্ষাগতা যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র বয়লার পরিচালনার জন্য তিনবছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই তারা পরীক্ষা দিতে পারবেন। ৪০ নম্বরের লিখিত এবং ভাইবা ও হাতে কলমে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কৃতকার্যরা সনদ পেলে যেকোনও কারখানার বয়লার অপারেটর হিসাবে নিয়োগ পেতে পারবেন।

জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৫০টি বয়লার পরিদর্শন করে চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ৪১৫টি। স্থানীয়ভাবে তৈরি বয়লার পরিদর্শন শেষে সনদ দেওয়া হয় ১৮১টি। একই সময় ১ হাজার ২৩৩ জনকে বয়লার অপারেটর সদন দেওয়া হয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে পাঁচহাজার অপারেটর রয়েছেন।

টঙ্গীর টাম্পাকোর কারখানার বয়লারের বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গত জুনে কারখানার বয়লার পরিদর্শন করে আগামী ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ দেওয়া হয়েছে। অপরটি আগামী দুই/তিন মাস পর পরিদর্শন করে মেয়াদ নির্ধারণের কথা ছিল। তার মধ্যেই এই দুর্ঘটনা। যদিও প্রথমে খবর এসছিল বয়লার বিস্ফোরণ, তবে সেরকম কিছু হয়নি।’

টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেডের কারখানার সনদপ্রাপ্ত বয়লার অপারেটর ইমামউদ্দীন বলেন, ‘আমি এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করছি এখানে। আমাদের গ্যাস লাইনে কিছু লিকেজ ছিল। সেই ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ওইদিন রাতে খালেক নামে অপর এক অপারেটর বয়লার চালাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৪টার দিকে বয়লার বন্ধ করে দেওয়া হয়। নতুন ভবনের ভেতরে বয়লার। সেখান তা অক্ষত রয়েছে। পুরনো ভবনের গেইটের সঙ্গেই গ্যাসের কন্ট্রোল রুম। সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। খালেক অক্ষত অবস্থায়ই কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে।’

উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড কারখানায় বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে ভবনটি ধসে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধসে পড়া ভবনটির নীচে আরও শ্রমিক চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা কারখানা ও হাসপাতালের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এ ঘটনায় টঙ্গী মডেল থানায় নিহত এক শ্রমিকের স্বজন কারখানা মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা তদন্তে করতে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিসিক ও জেলা প্রশাসক পৃথক কমিটি গঠন করেছে।