• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

৫০ সেতুর টোল বাড়ছে-৩৬১ রুটে পরিবহন খরচ বাড়বে ॥ ১ জুলাই থেকে নতুন টোলনীতি


প্রকাশিত: ৪:০১ এএম, ১২ জুন ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩০৪ বার

ppppস্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা ১২ জুন ২০১৪:   রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথে বুড়িগঙ্গা সেতু পারাপারের জন্য এখন ট্রাকপ্রতি টোলের হার ৩০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রেও তা-ই। মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে টোলের হার ২০ টাকা। কিন্তু ১ জুলাই থেকে নতুন টোলনীতি কার্যকর হলে এই সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রাকের জন্য টোল আদায় করা হবে ৬০০ টাকা। বাসের টোল বেড়ে হবে ২৭০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল হবে ১২০ টাকা আর প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে তা হবে ৭৫ টাকা।

খুলনার খানজাহান আলী (রূপসা) সেতুতে বড় ট্রাকপ্রতি এখন টোল আদায় করা হচ্ছে ১৬০ টাকা। নতুন টোলনীতিতে এক লাফে তা বেড়ে হবে ৭৫০ টাকা। বাসের টোল ১৫০ থেকে বেড়ে হবে ৩৪০ টাকা।

শুধু এই দুই সেতু নয়, সওজ (সড়ক ও জনপথ) অধিদপ্তরের ৫০টি সেতুতে আগামী জুলাই থেকে বাড়তি টোল আদায়ের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এসব সেতুতে টোল বাড়বে ২.২৭ থেকে ১০২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এমনকি দেশীয় অর্থে নির্মিত যেসব সেতুর নির্মাণ ব্যয় এরই মধ্যে তোলা শেষ হয়েছে, সেগুলোর টোল মওকুফের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে উল্টো টোল বাড়ানো হচ্ছে। অথচ কৃষকদের পণ্য পরিবহন ব্যয় কমাতে জনপ্রতিনিধিদের চাপে পড়ে নির্মাণ ব্যয় তোলা শেষ হয়েছে এমন ১৪ সেতুর টোল মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। বাড়তি টোল আদায়ের তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ একাধিক সেতুও রয়েছে।

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু। জাপান সরকারের অর্থায়নে ১৯৯১ সালে নির্মিত মেঘনা সেতুর আয়ু ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। কিন্তু ১৩ বছর না যেতেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে, গাড়ি চলাচলের সময় কেঁপে উঠত। মেঘনা সেতু চালু হওয়ার তিন বছর পর চালু হয় মেঘনা-গোমতী সেতু। কয়েক বছর না যেতেই সেটিরও নাম ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। সেতু দুটি মেরামত করে এখন কোনোভাবে চালু রাখা হয়েছে। সওজ অধিদপ্তরের সমীক্ষা অনুসারে, এ দুই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বা ১২ হাজার গাড়িই পণ্যবাহী ট্রাক। বড় আকারের ট্রাকপ্রতি টোলের হার ১০০০ টাকা। নতুন টোলনীতিতে টোলের হার হবে ১৫০০ টাকা। ১২ হাজার পণ্যবাহী ট্রাকে টোল বাবদ প্রতিদিন উঠবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই নতুন এই টোলনীতি করা হয়েছে। বাড়তি টোলের নতুন হার নির্ধারণ করতে এরই মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় একটি টাস্কফোর্সও গঠন করেছে। এখন পর্যন্ত ৩০টি সেতু চিহ্নিত করে টোলের হার নির্ধারণ করেছে টাস্কফোর্স। বাকি ২০টি সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে তারা একটি প্রস্তাব তৈরি করবে। চলতি মাসে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর এক মাস প্রচারণা চালিয়ে ১ জুলাই থেকে বাড়তি টোল আদায় শুরুর পরিকল্পনা করেছে মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৪ মার্চ মন্ত্রিসভা বৈঠকে টোলনীতি-২০১৪ অনুমোদন পেয়েছে। এই টোলনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের ৭৫১ থেকে ১০০০, ৫০১ থেকে ৭৫০ ও ২০১ থেকে ৫০০ মিটার ও ১০০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতুর টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে।

টোলের সঙ্গে বাড়বে জনদুর্ভোগ : বর্তমানে দেশে ৬১টি সেতু থেকে টোল বাবদ প্রতি অর্থবছরে গড়ে ৩৮০ কোটি টাকা আয় হয়। নতুন টোলনীতি বাস্তবায়িত হলে এর সঙ্গে বাড়তি কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা যোগ হবে। তবে বাড়তি টোলে সরকারের আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। ৫০টি সেতুতে টোল বাড়ালে দেশের ৩৬১টি রুটে বাস, ট্রাক ও ছোট পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাজারে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সাধারণ মানুষকে বইতে হবে বাড়তি টোলের ভার। টোল বাড়লে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা মালিকদের একটি অংশ পরিকল্পনা শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, টোলের হার দিন দিন কমার কথা, অথচ তা বেড়েই চলেছে। টোল বাড়ানোর পর গাড়ির মালিকরা ভাড়া বাড়ালে আমাদের কিছু করার থাকবে না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, টোল নীতিমালা অনুমোদনের পরপরই তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম। দেশের সর্বত্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। জনস্বার্থবিরোধী এই নীতির নামে টোল বাড়ানো হলে আমরা যাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় নামব। কারণ এতে গাড়িভাড়া ও পণ্যের দাম বাড়বে। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, টোলনীতি অনুসারে পাওয়া টোলের অর্থ সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের কাজে ব্যয় হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে পরিমাণ আয় হবে, সড়ক সংস্কার করেও তা থেকে উদ্বৃত্ত থাকবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনেই টোলনীতি : যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই টোলনীতি করা হয়েছে। সওজ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের ওপর চার্জ আদায় করে সেই আয় থেকে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করতে ১৯৯৩ সাল থেকে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু প্রয়োজনীয় নীতিমালা না থাকায় বিশ্বব্যাংকের এ পরামর্শ বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১২ সালের মার্চে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় সড়ক থেকে টোল আদায়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দুর্নীতির যড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। সে সময় বিশ্বব্যাংকের ওপর নাখোশ হয়ে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। অথচ এখন সেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনেই করা হয়েছে টোলনীতি।

তবে এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আমরা সড়ক তহবিল গঠন করেছি। তহবিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি আরটিএ), ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), সওজ অধিদপ্তরসহ সড়ক বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থার আয় যোগ হবে। টোল বাবদ আয়ও তহবিলে যাবে। আমরা আমাদের প্রয়োজনে টোলনীতি করেছি।

কোন সেতুতে কত টোল বাড়ছে : যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা সেতু ছাড়াও ঢাকার ধল্লা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ও পিরোজপুরের বলেশ্বর সেতুতে টোল বাড়বে ৩০৮ থেকে ৭৩০ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের গাবখান, জামালপুরের ঝিনাই ও জিঞ্জিরাম, শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র, টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙ্গা, কক্সবাজারের মহেশখালী ও তৈলারদ্বীপ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা, মকরমপুর ও চৌডালা, কুড়িগ্রামের ধরলা, দিনাজপুরের মোহনপুর, বাগেরহাটের দড়াটানা ও কুষ্টিয়ার মাছ-উদ-রুমী সেতুতে টোল বাড়ছে ১২৫ থেকে ১০২৫ শতাংশ। পটুয়াখালী, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, মোল্লারহাট ও মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ সেতুতে টোল বাড়বে ২০৫ থেকে ৬৩০ শতাংশ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের শাহ আমানত সেতুতেও এই হারে টোল বাড়বে।

মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুতে এখন বাসের টোল নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে নেওয়া হবে ৬৪০ টাকা। মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুতে মাঝারি ট্রাকে টোল নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। টোলনীতি বাস্তবায়ন হলে বেড়ে হবে ৭৫০ টাকা। ছোট ট্রাকের টোল নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। তা বেড়ে হবে ৫৭০ টাকা। মিনিবাসের টোল এখন ১৫০ টাকা। বেড়ে হবে ৩৮০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৩০০ টাকা। প্রাইভেট কারের টোল এখন ১০০ টাকা, তা বেড়ে হবে ১৮০ টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার বাসচালকদের এই বাড়তি টোল দিতে হবে। এই পথের বাসচালক নজির হোসেন বলেন, সব সেতুই জোড়াতালি দেওয়া, রাস্তাও ভাঙাচোরা। তার ওপর টোল দিতে হইব ক্যান?

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত ভৈরব সেতুতে এখন বড় ট্রাকপ্রতি টোল নেওয়া হয় ৩০০ টাকা। মাঝারি ট্রাকে ২০০ টাকা। টোল বাড়লে নেওয়া হবে বড় ট্রাকপ্রতি ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকপ্রতি ৩৭৫ টাকা। এ ছাড়া ছোট ট্রাকের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকার টোল বেড়ে হবে ২৮৫, বড় বাসের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা বেড়ে হবে ৩৪০, মিনিবাসের টোল ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের টোল ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শাহ আমানত সেতুতে এখন বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে টোল নেওয়া হয় ১০০ টাকা। আর মাঝারি ট্রাকের ক্ষেত্রে ৮০ টাকা। টোল বাড়লে বড় ট্রাকে নেওয়া হবে ৬৩০ টাকা ও মাঝারি ট্রাকে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ছোট ট্রাকের টোল ৩০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ২২৫, বড় বাসে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৭০ টাকা, মিনিবাসে ২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ২০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা এবং প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে ২০ টাকা থেকে টোল বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫ টাকায়।

খুলনার খানজাহান আলী (রূপসা) সেতুতে মাঝারি ট্রাকের টোল ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৩৭৫ টাকা। ছোট ট্রাকের টোল ৬০ টাকা থেকে হবে ২৮৫ টাকা, মিনিবাস প্রতি টোলের হার ৬০ থেকে বেড়ে হবে ১৯০ টাকা। আর মাইক্রোবাসের বিদ্যমান টোলের হার ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১৫০ টাকা। প্রাইভেট কারের টোল ৩০ থেকে বেড়ে হবে ৯৫ টাকা।

পাটুরিয়া থেকে ২২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থিত তরা সেতু। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে নির্মিত এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় তোলা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো টোল আদায় বন্ধ হয়নি। এলাকাবাসী সেতুটির টোল মওকুফের দাবি তুলেছে। সেই দাবি খারিজ করে উল্টো টোল বাড়ানো হচ্ছে। মানিকগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি হাজি নান্নু বলেন, তরা সেতুর টোল বাড়ানো হলে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেব। একইভাবে নির্মাণ ব্যয় উঠে গেলেও ঢাকা জেলার ধলেশ্বরী-১ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার ধলেশ্বরী-২ সেতুতেও টোল আদায় করা হচ্ছে। নতুন টোলনীতি অনুযায়ী এই তিন সেতুতে যানবাহনভেদে টোল বাড়ছে ১২৫ থেকে ৩৪৮ শতাংশ। দিনাজপুরের মোহনপুর সেতুরও নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে। মওকুফ না করে একই হারে এই সেতুর টোলও বাড়ানো হচ্ছে।

পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পাবনা ও কুষ্টিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী লালন শাহ সেতু। ২০০৩ সালে নির্মিত চার লেনের সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ২০০৪ সালের ১৮ মে থেকে এই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। এতে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। নতুন টোলনীতি অনুযায়ী, এই সেতু দিয়ে বড় ট্রাকে টোল বাড়বে ২৫০ শতাংশ। এখন বড় ট্রাকে নেওয়া হচ্ছে ২১৫ টাকা, তা বেড়ে হবে ৭৫০ টাকা। বাসের টোল ২১৫ থেকে বেড়ে হবে ৩৪০ টাকা।

বরিশালের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) ও মেজর এম এ জলিল (শিকারপুর) সেতু দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতু। বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে সেতু দুটি উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। বাড়তি টোলের তালিকায় এ দুই সেতুর নামও আছে। যদিও আলোর অভাবে এখনো ঝুঁকি নিয়ে সেতু দুটি পাড়ি দিতে হয় চালকদের। টোল আদায়কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান সন্সের শ্রমিক মিলন মাহমুদ জানান, সেতু দুটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার বাস-ট্রাক চলাচল করে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, টোল আদায়ের হার বাড়ালে সেই অনুপাতে ভাড়াও বাড়ানো হবে। কারণ বাড়তি টাকা তো মালিক তাঁদের পকেট থেকে দেবেন না। অতিরিক্ত টাকা যাত্রীদের গুনতে হবে। ফরিদপুরের গড়াই সেতুতেও একই হারে টোল বাড়ছে।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সড়কপথে যোগাযোগের মাধ্যম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক। এই মহাসড়কের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালীতে অবস্থান গড়াই সেতুর। এই সেতু দিয়ে গড়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার যানবাহন চলাচল করে। সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে সেতু থেকে টোল আদায় করছে একটি প্রতিষ্ঠান। টোলনীতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের আয় বেড়ে যাবে কমপক্ষে ১২৫ শতাংশ।

জামালপুর-ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে ঝিনাই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। ১৮৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে জামালপুরের মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এই সেতুর টোল মওকুফের দাবি বহুদিনের। গত ১৬ মার্চ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে এ অঞ্চলের অনেকেই বিপর্যস্ত। এ কারণে এখানকার মানুষের পক্ষে টোল দেওয়া কষ্টকর। তবে মওকুফের দাবি টেকেনি। বাড়তি টোল আদায়ের তালিকায় এই সেতুর নামও আছে।

ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু : টোল বাড়ানোর পর পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা মালিকদের একটি অংশ পরিকল্পনা শুরু করেছে। সর্বশেষ ভাড়া বাড়ানোর জন্য গত মাসে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের একটি অংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, গাড়ির যন্ত্রপাতি, জ্বালানির দাম ও টোলের হার বাড়লে ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়ে থাকে। ৫০টি সেতুতে টোল বাড়ানো হলে গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কেই বাড়তি ব্যয় করতে হবে। পরিবহন ব্যয় বাড়লে ভাড়া তো বাড়বেই। ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে বহু ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতেও টোল দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, টোল বাড়ানো হলে ভাড়া বাড়ানোর নতুন একটি ইস্যু তৈরি হবে। এমনিতেই পরিবহন পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গেছে। ফেরি পারাপারের টোল, জ্বালানির দামসহ ১৭টি বিষয় বিবেচনায় রেখে ভাড়া বাড়ানো হয়। এর মধ্যে টোলের হারও একটি বিষয়। ভাড়া বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষকেই তার মাসুল দিতে হবে।

উত্তরবঙ্গ ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন খান মোহন বলেন, টোল বাড়ানো হলে গাড়িভাড়া বাড়াতেই হবে। টোল বাড়ানো হলে আমরা কিছু গাড়ি বন্ধ রেখে টোল কমানোর দাবি জানাব।

প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক চলাচল করে। পাবনা জেলায়ই দুই হাজার ট্রাক আছে।