৪ নারী ধর্ষণকারী ডাকাত’রা যা বললো-
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চার নারী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার মিজান মাতব্বর ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মহানগর হাকিম আল ইমরানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দা আবু শামার পরিকল্পনায় ওই বাড়িতে পাঁচ জন মিলে ডাকাতি করে। তবে আবু শামা ওই বাড়িতে না ঢুকে বাইরে অপেক্ষা করছিল।
জবানবন্দিতে মিজান মাতব্বর ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ইলিয়াছ নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। গত ১১ ডিসেম্বর ইলিয়াছ তাকে ফোন করে নিউমার্কেট মোড়ে দেখা করে। ওই সময় ইলিয়াছের সঙ্গে ছিল আবু শামা। এ সময় ইলিয়াছ তাকে বলে, নদীর ওপারে একটি কাজ আছে। করতে পারলে অনেক টাকা–পয়সা পাওয়া যাবে। সঙ্গে আরও লোক থাকবে। কোনও সমস্যা হবে না।
মিজান মাতব্বর আরও বলেছেন, পরদিন (১২ ডিসেম্বর) বিকালে তিনি নিউমার্কেট থেকে ইলিয়াছ, মহিবুল ও আরও এক লোক টেম্পুতে উঠে প্রথমে নতুন ব্রিজ এলাকায় যান। পরে সেখান থেকে বাসের ছাদে উঠে সমিতির হাট যান। গাড়ি থেকে নামার পর আবু শ্যামা ও ইলিয়াছ বাড়িটি সম্পর্কে তাদের ধারণা দিয়ে চারপাশ দেখতে চলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর এসে তারা জানায়, ঘরের চারপাশে দেয়াল দেওয়া আছে। একটু সমস্যা হবে। সবাই মিলে আরও কিছুক্ষণ পরিকল্পনা করা হয় কিভাবে কাজ করা যায়। পরে ইলিয়াছ ও আবু শামা বিল থেকে একটি বাঁশ সংগ্রহ করে।
জবানবন্দিতে মিজান আরও বলেন,‘আমরা অনেকক্ষণ বাড়িটির পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করি। পরে রাত ১টার দিকে আমরা বাড়ির উত্তর দিকে অবস্থান নেই। প্রথমে ইলিয়াছ তারপর মহিদুল ওরফে মহিবুল এরপর আমি ও পরে মহিবুলের সঙ্গে থাকা আরও একজন বাঁশের সাহায্যে সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করি। আমাদের সঙ্গে দুটি টর্চলাইট ছিল। জানালার গ্রিল কেটে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করার পর প্রথমে কোনও লোকজন দেখিনি।
হঠাৎ টেবিলের ওপর থাকা একটি চাবির তোড়া মেঝেতে পড়ে গেলে শব্দ হয়। সেই শব্দে একটি রুম থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পাই। ইলিয়াছ এবং মহিদুল প্রথমে ওই রুমে ঢোকে, পরে আমরা দু’জনও ঢুকি। ওই রুমে দুজন নারী ছিল। পাশের রুমেও দুই জন নারী ছিল। বাসাটিতে কোনও পুরুষ ছিল না। আমাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র থাকলেও ইলিয়াছের হাতে একটি ছোরা ছিল।
অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখালে তারা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা দিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ইলিয়াছ বলে ওই নারীদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তাদের কাছে আরও স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা থাকতে পারে। ইলিয়াছ এবং মহিদুল দুই নারীকে নিয়ে দুই রুমে চলে যায়। অপরজন আরেক নারীকে নিয়ে অন্য রুমে ঢোকে। প্রায় ১৫/২০ মিনিট পর তারা নারীদের ভেতরে রেখে রুম থেকে বের হয়ে আসে।’
মিজান মাতব্বর জবানবন্দিতে আরও বলেন,‘তারা তিন জনই তিন নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে আমাকে জানায়। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গেট খুলে বের হয়ে কিছুদূর গেলে আবু শামাকে পাই। ডাকাতির টাকা থেকে আমাদের প্রত্যেককে ১৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। স্বর্ণগুলো ইলিয়াছ নিয়ে যায়। পরে ফজরের আজানের পর দুটি ট্যাক্সি নিয়ে আমরা খেয়াঘাটে যাই। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে নেভাল এলাকায় নেমে আবু শামা ও আমি রাইডারে সিমেন্ট ক্রসিং চলে আসি। বাকিরা নিজেদের মতো চলে যায়।’
গত ১২ ডিসেম্বর কর্ণফুলী থানাধীন শাহমীরপুর এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতির পর ওই পরিবারের চার নারীকে ধর্ষণ করে ডাকাতরা। এ ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের হস্তক্ষেপে ঘটনার পাঁচ দিন পর ১৭ ডিসেম্বর মামলা নেয় পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ নিজেও ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ওই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওইদিন বিকালে পিবিআই মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতব্বরকে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে আদালতে হাজির করে। মিজানের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার বধ্যামারি গ্রামে। তার বাবার নাম মোতালেব মাতব্বর। পেশায় টমটম চালক মিজান নগরীর হালিশহরে মকবুল কন্ট্রাক্টরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। আবু শামাকেও গ্রেফতার করেছে পিআইবি। বুধবার তাকে আদালতে নেওয়া হয়।