৪ কোটি টাকা নয়ছয় মামলায় তারেককে কব্জায় নেয়া হচ্ছে
বিশেষ প্রতি্বেদক : প্রায় ৪ কোটি টাকা নয়ছয় মামলায় পার পেয়ে যাওয়া তারেক রহমানকে ফের কব্জায় নেয়া হচ্ছে।এজন্য সমন পাঠানো হচ্ছে।দুদকের দায়ের অর্থপাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন করে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুটি জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং তারেক রহমানকে সমনের নোটিশ পাঠানোর আদেশও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আমির হোসেনের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। এছাড়া অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানির বিষয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন। গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচারকৃত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫,৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয় বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০২ এর ২ (ঠ), (অ), (আ) ও ১৩ ধারায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন দুদকের দায়ের করা মামলার রায়টি দিয়েছিলেন। মামলা দায়ের থেকে রায় পর্যন্ত পুরো বিচার প্রক্রিয়ায়ই তারেক রহমান অনুপস্থিত ছিলেন।
খালাসপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামুনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রায়ে বিচারক বলেন- মামলার প্রধান সাক্ষী নির্মাণ কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলাম মামুনকে দেওয়া টাকা কনসালটেন্সি ফি হিসাবে দিয়েছেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন, মামুনও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ওই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা ফি হিসাবে নেওয়ার মতো কনসালটেন্সি ফার্ম মামুনের ছিল না। ওই টাকা অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেই টাকা দেশে গ্রহণ করলে বিভিন্ন ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিদেশে ওই টাকা গ্রহণ করা হয়, যা মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৫০,০০০ ডলার উত্তোলন করে খরচ করেছেন। ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমানও অস্বীকার করেননি।২০০৭ সালে তারেক রহমান দুদকে দাখিল করা হিসাব বিবরণীতে তা উল্লেখ করেছেন বিধায় তারেকের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৬ মে তৎকালীন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হোসেন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে চার্জশিট বহির্ভূত সাক্ষী হিসাবে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫,৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।