• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

৪৮০ জনের বক্তব্যে পাসপোর্ট নিয়ে টিআইবি রিপোর্ট ভুয়া-ভিত্তিহীন বাজে


প্রকাশিত: ১০:৪১ পিএম, ১৪ জুলাই ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি   :   ৪৮০ জনের বক্তব্যে পাসপোর্ট অধিদফতর নিয়ে টিআইবি রিপোর্ট ভুয়া,

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান

ভিত্তিহীন, বাজে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া এবং সরকারকে হেয় করার শামিল বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান।

সেবা খাত নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন ও মনগড়া উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। তারা বলছে, মাত্র ৪৮০ জন লোকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

আজ বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ অধিদপ্তরের কার্যপরিধি সম্পর্কে না জেনেই আমাদের তথা বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস চালিয়েছে টিআইবি।’

জানা গেছে, ২৯ জুন ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১৫’ শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে। পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াগুলোতে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। এ সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারীদের ৭৬ শতাংশই বলেছেন, তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে সময়ক্ষেপণ, প্রতারণা, স্বজনপ্রীতি ও আত্মসাতের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন সেবাগ্রহীতারা।

সংবাদ সম্মেলনে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ রেজওয়ান জানান, ১১ জুলাই টিআইবির সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিবেদনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে টিআইবিকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘টিআইবির জরিপটি করা হয়েছে ১৫ হাজার পরিবার বা খানার ওপর। তারা ৩ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ৪৮০ জন পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তির কথা বলেছেন। অথচ আমরা এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ পাসপোর্ট দিয়েছি। মাত্র ৪৮০ জনের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে একটি পুরো খাত বা বিভাগকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা কতটা সমীচীন।’

মাসুদ রেজওয়ান আরও বলেন, ‘আমরা টিআইবিকে বলেছি, পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে পুলিশ ভেরিফিকেশন, ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া, কাগজপত্র সত্যায়ন, জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহসহ আরও অনেক বিষয় জড়িত। আমার অফিসের বাইরে যেসব বিষয় নিয়ে দুর্ভোগ বা ভোগান্তি, তার দায় অধিদপ্তরের ওপর কোনোভাবেই বর্তায় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ওনার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। ওনাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে আমরা তাঁদের পুরো গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। যেভাবে আমরা জরিপটি করেছি, যে পরিমাণ খানায় জরিপ হয়েছে, সেটা প্রতিনিধিত্বশীল।’

পাসপোর্ট বিভাগকে হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বিভাগকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করিনি। আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্নীতির শিকার হন।’

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর টিআইবি তাদের জন্য আলাদা সুপারিশমালা তৈরি করছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেখানে তাঁদের অভিমতেরও প্রতিফলন তুলে ধরা হচ্ছে। পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ যে বিষয়টি নিয়ে, তা হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার বিষয়টি সুপারিশে থাকছে বলে জানান তিনি।

পাসপোর্ট অফিস সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত কি না? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কোনোভাবেই বলব না যে দুর্নীতিমুক্ত। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুর্নীতির কারণে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে যেসব জায়গায় হয়রানির অভিযোগ শোনা যায়, সেগুলো নিরসনের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান মহাপরিচালক। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে ব্যাংকিং, সোনালী ব্যাংক ছাড়াও পাঁচটি ব্যাংকে টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ট্রাস্ট ব্যাংকে হয়রানি ছাড়াই টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে।

অনলাইনে ফরম পূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে দালালদের মাধ্যমে ফরম পূরণের জন্য টাকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। সত্যায়নের যে ব্যবস্থা রয়েছে, সেটা তুলে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ফরম পূরণ করে দিতে পাসপোর্ট অফিসে হেলপ ডেস্ক চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে পুলিশ ভেরিফিকেশন চালুর বিষয়ও ভাবনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।