• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

৪০ লাখ ঘুষে বোল্ড দুদকের এনামুল


প্রকাশিত: ৫:২৯ পিএম, ১০ জুন ১৯ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে পুলিশ কর্তার ৪০ লাখ টাকা ঘুষে বোল্ড হয়ে গেলেন দুদক সেই এনামুল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তদন্ত চলাকালে তদন্তাধীন তথ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে পাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এতথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থেই খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।বরখাস্ত হওয়া খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে পুলিশের বিতর্কিত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে দায়মুক্তি দিতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও তদন্তাধীন তথ্য পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলওয়ার বখ্তকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন লিগ্যাল অনুবিভাগের মহাপরিচালক মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান। তাঁরা প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এ কারণে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।এর আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।

গত ছয় মাস ধরে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়। রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর। কিন্তু গত ২ জুন খন্দকার এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকাপয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন। প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন এনামুল বাছিরের সঙ্গে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড। এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় দুদকের কমিশনারের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা ও তাঁকে দুদক পরিচালকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।দুদক পরিচালক এনামুল বাছির তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দুদকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগ পাওয়া যায়।