• বৃহস্পতিবার , ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

৪মাস পেছালো সালমান খুনের প্রতিবেদন


প্রকাশিত: ৩:৫৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ১৮ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯১ বার

 

কোর্ট রিপোর্টার :  ফের পিছিয়ে গেল নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিনক্ষণ। salman-shah-www.jatirkhantha.com.bd.11আজ ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি জানিয়েছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তৎকালীন ঢাকাই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। সে সময় তার বাবা কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানের বাবা তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। সে বছরের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দেয়। তাতে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে বছরের ২৫ নভেম্বর সিএমএম আদালত সিআইডির  চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

salman-shah-www.jatirkhantha.com.bdতাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন সালমানের বাবা। ওই মামলার ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটিকে ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান। এর ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সিএমএম বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল হয়। সে প্রতিবেদনেও সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি নারাজি দাখিল করেন। যার ধারাবাহিকতায় মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ছিলো বৃহস্পতিবার(২৬ এপ্রিল)। আর সে মোতাবেক আদালতের সামনে ছেলের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশায় দাঁড়ান মা নীলা চৌধুরী। তার দাবী ছেলেকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। কিন্তু আদালত এদিন সালমানের রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তের জন্য চাইলো আরো চার মাস সময়।

‘হত্যা’ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে নীলা চৌধুরী জাতিরকন্ঠকে বলেন, সকাল থেকে আদালতের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। সকাল ১০ থেকে ১টা পর্যন্ত আমি ছিলাম। এখনো সালমানের ভক্ত অনুরাগীরা ব্যানার নিয়ে আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সকালে দাঁড়ানোর পর আমাদের কাছে পুলিশ আসলো। এসে তারা আমাদের কাছে সময় চেয়েছে।

বললো, ইনজেকশান দিয়েছিলো যে ডাক্তার এবং মর্গের ডোমদের পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাদের সন্দেহ করেছিলো। তাদের দাবী, শিগগির ডাক্তার ও ডোমকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আর এজন্যই আমাদের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়েছে পুলিশ। আমি ভেবে দেখলাম, পুলিশের কথা ঠিক। এবং সালমানের হত্যা মামলায় এমন ইনভেস্টিগেশন গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য আমরাও সময় বাড়িয়ে দিয়েছি।

নীলা চৌধুরী বলেন, মাননীয় আদালত আমাদের সাথে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেছেন। খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের বলেছেন। তারাও সুষ্ঠু বিচার চান বলে আমাকে জানিয়েছেন। তাই আগামি ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। আমিও তাদেরকে এই লম্বা সময় দিয়েছি। যেনো সব ইনভেস্টিগেশন করে পরবর্তী তারিখে আর কিছু না বলতে পারেন, বা তারিখ পেছাতে পারেন।

এছাড়া অনেক দূর দূরান্ত থেকে সালমানের ভক্ত অনুরাগীরা ঢাকায় আসেন, আমি নিজেও অসুস্থ। আর দৌড়াদৌড়ি করতে শরীরে সায় দেয় না। গত ২২ বছর ধরেতো করছিই। তবে এবার আশা করছি, আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাবো।আগামি চারমাসে সালমান হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবীর আন্দোলন আরো ছড়িয়ে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন নীলা চৌধুরী। এখনো ষড়যন্ত্রকারী একটি মহল সালমান হত্যার বিচারকে বানচালের চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

এমনকি দূর দূরান্ত থেকে সালমান হত্যার বিচার চাইতে যেসব ভক্ত অনুরাগীরা ঢাকায় এসেছেন তারাও আজকে হুমকি পেয়েছেন জানিয়ে সালমানের মা বলেন, আদালত আরো চার মাসের সময় চাইলো তদন্তের জন্য। আমি মনে করি এই চারমাসে সালমান শাহ’র হত্যার বিষয়টি খোলাসা হবে। সালমান হত্যা বিচারের দাবী আরো ত্বরান্বিত হবে। যদিও আজকেও শুনেছি যেসব ভক্ত অনুরাগীরা সালমানের বিচার চাইতে ঢাকায় এসেছে তাদের হুমকি ধামকি দিয়েছে কেউ। কারা এটা করছে এটা আমাকে কেউ বলছে না। আমার পেছনেওতো লোক আছে, ফলো করে। তবে এসব করে কিছুই হবে না। সালমান হত্যার বিচার হবেই ইনশাল্লাহ।

১১ জন মিলে সালমানকে হত্যা করে-

সালমান শাহ এর মা নীলুফার চৌধুরীর অভিযোগ আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন মিলে সালমান শাহকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের মধ্যে আছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সালমানের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি, ঢালিউড সিনেমার খল অভিনেতা ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি।

এই, আসামিরা এখন কে, কোথায়?
জানা গেছে, সামিরা ও তার মা দেশেই থাকেন রাজধানীর বারিধারায়। ডনও ঢাকায় থাকেন। রাবেয়া সুলতানা রুবি এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। রুবি থাকতেন ফিলাডেলফিয়ায় স্বামী জিন চেনের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে এখন নিউইয়র্কে এসে থাকছেন তিনি। নিউইয়র্ক ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল টাইম টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব জানান রুবি।

সালমান হত্যা মামলার আরেক আসামি আজিজ মুহাম্মদ ভাই একজন বড় শিল্পপতি। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম, টিপ বিস্কুট, এনার্জি বিস্কুট এগুলোর মালিক তিনি । স্বপরিবারে তিনি এখন ব্যাঙ্ককে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।