• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

৩ সেনা কর্তা খুনের নয়া মোড়-অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ


প্রকাশিত: ১:০৭ এএম, ১৩ মে ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬০ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : ৩ সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান। তিনি বলেন, একটি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে একই সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম এবং এটিএম হায়দার বীর উত্তম হত্যার অনুসন্ধান চলছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্যু পালটা ক্যুর মধ্যে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা মামলাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্র জানায়, মামলাটির একমাত্র জীবিত আসামি ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আবদুল জলিলের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা যেসব আসামি রয়েছেন, তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এডিসি বলেন, ৪৮ বছর পরে একটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা প্রাথমিক যে কাজ সেটি করছি। যেহেতু অনেক বছর আগের ঘটনা, তাই একটু সময় লাগবে। তাছাড়া অভিযোগকারীরা যেসব অভিযুক্তদের কথা বলেছেন, তাদের অধিকাংশই মারা গেছেন। অভিযোগকারীরা যে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা বলছেন আমরা সেটি যাচাই-বাছাই করছি।

একমাত্র যে আসামি বেঁচে আছেন মেজর (অব.) আবদুল জলিল। তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি বলেন, আমরা কাজ করছি। এটা প্রক্রিয়াধীন। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করা হয়। মামলাটি করেন হত্যার শিকার কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। মামলার এজাহারে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের নির্দেশে তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে মেজর (অব.) আবদুল জলিলসহ ২০-২৫ জনকে।

ঘটনা সম্পর্কে এমপি নাহিদ ইজাহার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, বাবার হত্যাকাণ্ডের সময় আমাদের দুই ভাইবোনের বয়স পাঁচ ও আট বছর। তখন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে। বাবার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তথ্য-প্রমাণ যতটুকু হাতে পেয়েছি সে অনুযায়ী এখনই মামলা করার সঠিক সময় বলে মনে হয়েছে। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচার হোক।

ওদিকে মামলার এজাহারে নাহিদ ইজাহার উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৫ সালে তার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ কমান্ডার হিসেবে রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ওই অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে তিনি নিহত (শহিদ) হন। সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার বীর উত্তম নিহত (শহিদ) হন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তারা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারেন-ওই দিন সকালে তার বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তা ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে উপস্থিত ছিলেন। যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে ছিল। তার বাবা যখন নাস্তা করছিলেন তখন দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে টেলিফোন আসে। এরপর তার বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা।

তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকরা মিলে আনুমানিক ২০-২৫ জন সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা জেসিও এবং সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব.) এই তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়োনেট চার্জ করেন। তৎকালীন ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ ও মেজর মুকতাদির (তৎকালীন ক্যাপ্টেন, সাবেক পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

নাহিদ ইজাহার এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা যোগদান করেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। তার নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে, একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে তার ভাই গিয়েছিলেন বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ হচ্ছিল। তিনি আবেদনে তার বাবার নাম দেখে ভাইকে অফিস থেকে বের করে দেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায়। দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই তিনি তার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা হত্যার বিচার দাবি করেছেন।