• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

২ সন্দেহভাজন খুঁজছে র‌্যাব- সাগর-রুনি হত্যায় শততম বারের মত সময়


প্রকাশিত: ১০:৪৯ পিএম, ৭ আগস্ট ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০১ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠিয়ে দুই সন্দেহভাজনের ডিএনএ নমুনা মিললেও তাদের শনাক্ত করতে না পারায় আটকে আছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। এ মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন বলছেন, সন্দেহভাজন দুজনের পরিচয় বেরিয়ে এলেই তাদের তদন্ত এগিয়ে যাবে। তবে সেটা কবে নাগাদ সম্ভব, তার কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি।

প্রায় ১২ বছর আগের এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সোমবার শততম বারের মত সময় বাড়িয়েছে আদালত। এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ‍মুখপাত্র মঈন।র‌্যাব ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং আন্তরিকতার সঙ্গে’ এ মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, নির্দোষ কেউ যেন কোনোভাবে অভিযুক্ত হিসেবে জড়িয়ে না যান, সেই ব্যাপারটিও তদন্তে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা।

মঈন বলেন, তদন্ত তদন্তই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। আমরা মনে করি তদন্তকালীন সময়ে, অর্থাৎ আমরা যখন তদন্ত প্রতিবেদন দেব, তখন কোনভাবেই যেন কোনো নির্দোষ বা নিরাপরাধ ব্যক্তি ভিক্টিমাইজড না হয়।এ বিষয়টি মূলত আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। আমরা এই হত্যাকাণ্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমরা তদন্ত করছি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।সেই রাতে সেই ফ্ল্যাটে তারা দুজনের সঙ্গে ছিল তাদের একমাত্র সন্তান তখন পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ। তাকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুজন।

আলোড়ন তোলা এই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের রোমান। বিভিন্ন সময়ে মোট আটজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তে নামে। চারদিন পর তদন্তের ভার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।

তারা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও পাঠায় র‌্যাব। কিন্তু তাতেও তদন্তের অগ্রগতি হয়নি।
মঈন বলেন, আপনারা জনেন যে খুব কম হত্যাকাণ্ডের আলামত কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এই মামলার আলামত আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাই। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই কিন্তু আমরা পাঠিয়েছিলাম।

আমরা আনুমানিক ২৫ জনের, যাদের প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়েছিল, তাদের ডিএনএ আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা যে প্রতিবেদনটি পেয়েছি সেটি, আমরা পরীক্ষা করছি।এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেই ল্যাব থেকে আমরা যে প্রতিবেদন পেয়েছি সেটি যাচাই-বাছাই করে সেখানে আমরা দুজনকে পেয়েছি। ডিএনএ পরীক্ষা থেকে যে দুজন সাসপেক্ট পাওয়া গেছে তাদের আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি।

এটার ব্যাপারেই মূলত আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন। যে প্রতিবেদনটি এসেছে তার মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে কারা জড়িত তা বলার মত তথ্য আমরা পাইনি। এ বিষয়টি যখন আদালতে ডেট পরে, তখন আমরা আদালতে উপস্থাপন করি। তদন্ত শেষ করতে আর কতোদিন লাগতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা আলামতের যে ডিএনএ প্রতিবেদন পেয়েছি সেখানে আমরা দুজন সম্ভাব্য অপরাধীর আলামত পেয়েছি যেটা আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। এই শনাক্তের কাজটাই চলছে।

এটা হয়তো যখন আমরা শনাক্ত করতে পারব, তখন আমরা বলতে পারব কতোদিন লাগবে। এখানে যে বিষয় ভিক্টিমের যে পরিবার তাদেরকে আমরা বিভিন্ন সময় তথ্য দিয়েছি। তারাও এই বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল আছে। তদন্ত শেষ করতে এতদিন সময় লাগা স্বাভাবিক কি না– এমন প্রশ্নে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা। কেউ যেন এখানে ভিক্টিমাইজড না হয়।

অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, আপনারাও দেখেছেন, যে ব্যক্তি একেবারেই ইনভলভড না, তাকে জড়িত বলে আদালতে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদন দেন। অনেকে এরকম আছেন যে ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, অথচ দীর্ঘদিন ধরে জেল খাটছেন। আমরা এই ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না।সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি শনাক্ত করার জন্য বিশ্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রেও বেশি সময় লাগার উদাহরণ আছে বলে মন্তব্য করেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধী, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ পরীক্ষা থেকে যে সন্দেহভাজন দুজনের আলামত পাওয়া গেছে, তাদের শনাক্ত করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হচ্ছে। আপনারাও জানেন, ঘটনার পরবর্তীতে আলামত সংরক্ষণ একটু ডিফিকাল্ট ছিল।তারা দুজন যেহেতু সাংবাদিক ছিলেন, অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, অনেক মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন, তাই আলামতেরও কিছু বিষয় আছে আপনারা জানেন। দুজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। সেই ব্যক্তিগুলোকে পাওয়া গেলে পাওয়া যেতে পারে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না।