• বৃহস্পতিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৭১ লকারে মাফিয়া!বাংলাদেশ ব্যাংকের মাফিয়াদের ধরেন উপদেষ্টা মাহফুজ


প্রকাশিত: ৭:১৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩১ বার

প্রথমদিকে আলোচিত দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর কোনো অবৈধ সম্পদ পাওয়া না গেলে কাজী সায়েমুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২৬ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহানিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত এসকে সুরের সেইফ ডিপোজিট তল্লাশি করেন। সেখান থেকে এক কেজি সোনা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর জব্দ করলে উদ্ধার হয় ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার পাঁচশ টাকার অবৈধ সম্পদ। এর আগে উদ্ধারকৃত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও বীমার নথিপত্র এবং দুইটি অভিজাত ফ্লাটের দাম যোগ করলে সুরের উদ্ধারকৃত অবৈধ সম্পদ প্রায় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

 

শফিক রহমান : বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৭১ লকারে কি আছে তা জানতে চায় দেশবাসী। আওয়ামী লীগের দোসর দূর্নীতিবাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাফিয়া গোষ্ঠী এস কে সুর গংদের তেলেসমাতিতে দুদক পরিচালক অপসারণের বিচার চেয়েছেন দেশপ্রেমিক জনগন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৭১ লকারে কি আছে তা উদঘাটনে সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সত্য উদঘাটনে আগ্রহী দেশপ্রেমিক জনগন। দেশপ্রেমিক একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের দোসর দূর্নীতিবাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাফিয়া গোষ্ঠী- এস কে সুরের শিষ্যরা যেভাবে সৎ সাহসী দুদক পরিচালক সাইজ করেছেন তা অনুসন্ধানের দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তের দাগ কেটে না যেতেই সর্বপ্রথম মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠেছিল স্বৈরাচারের দোসর খুনি মাফিয়ার সহযোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের চিহ্নিত কর্মকর্তারা। এরপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার্স কাউন্সিলের নির্বাচনে। গত ২১ নভেম্বর ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদেরকে হারিয়ে ১৫টি পদের মধ্যে ৯টিতে আ’লীগের দোসর নীল দল বিজয়ী হয়। এই শক্তির সবচেয়ে বড় মিশন হচ্ছে দুর্নীতি দমনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দূর্বল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় আর্থিক কেলেংকারিগুলো ধামাচাপা দেয়া।

খুনী ফেসিস্ট সরকারের পতনের পর বর্তমান কমিশন গঠনের পর হাঁটি হাঁটি পা-পা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় দূর্নীতি দমন কমিশন অত্যন্ত গুরুত্ব ও সাফল্যের সাথে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। আর অভিযানগুলো পরিচালিত হয়েছে দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্ব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর- বিগত দিনে কাজী সায়েমুজ্জামানের এ ধরণের কার্যক্রমকে গণমানুষ ভুয়সী প্রশংসা করেছেন।

দেখা গেছে, দুদক কমিশনের পক্ষ থেকে কাজী সায়েমুজ্জামানকে বিশেষ কিছু অনুসন্ধান তদারকির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রথমদিকে আলোচিত দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর কোনো অবৈধ সম্পদ পাওয়া না গেলে কাজী সায়েমুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই গত ১৯ জানুয়ারি তিনি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরীর বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং দুই কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও বীমার নথি উদ্ধার করেন। এছাড়াও দুইটি অভিজাত ফ্লাটের কাগজপত্র জব্দ করেন।

গত ২৬ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহানিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত এসকে সুরের সেইফ ডিপোজিট তল্লাশি করেন। সেখান থেকে এক কেজি সোনা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর জব্দ করলে উদ্ধার হয় ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার পাঁচশ টাকার অবৈধ সম্পদ। এর আগে উদ্ধারকৃত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও বীমার নথিপত্র এবং দুইটি অভিজাত ফ্লাটের দাম যোগ করলে সুরের উদ্ধারকৃত অবৈধ সম্পদ প্রায় শত কোটি টাকা ছাড়য়ে যেতে পারে।

খোঁজ নিযে দেখা যায়, শুধু এসকে সুর নয় সাধারণ কর্মকর্তাদের সাথে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাও মহানিরাপত্তার কয়েন ভল্টে সেইফ ডিপোজিট রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন ওইসব সেইফ ডিপোজিট তল্লাশী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজী সায়েমুজ্জামানকে দায়িত্ব প্রদান করলে তিনি আদালতের মাধ্যমে ওইসব লকার ফ্রিজ তল্লাশি করার ব্যবস্থা নিলে ব্যাংকের আওয়ামী দোসর চক্র তাকে থামাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

তার সফলতায় ভয় পেয়ে যায় আওয়ামী লীগের দোসর কর্মকর্তারা। তারা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে যায়। দেখা যায়, দুদক পরিচালক তার প্রতিষ্ঠানের সফলতার নিউজ তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে শেয়ার দিয়েছিলেন। সেখানে সংবাদের ভেতরে দুই একটি লাইনের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মহানিরাপত্তার কয়েন ভল্টে কর্মকর্তাদের সেইফ ডিপোজিট প্রদর্শন করে রাখার প্রস্তাব করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে নিজের প্রতিষ্ঠানের সফলতা প্রচার করতে পারেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ তে এ বিষয়ে প্রচারে বা লিখতে কোনো বিধি নিষেধ নেই। উক্ত বিধিমালায় ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচারে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কাজী সায়েমুজ্জামান যে সংবাদ বা সংবাদের অংশ শেয়ার করেছেন তা মোটেও ভিত্তিহীন বা অসত্য নয়। বিষয়টি দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য। এটি শেয়ার করার আইনী সুরক্ষাও রয়েছে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১ তে জনস্বার্থ সংশ্লিস্ট তথ্য বলতে দুর্নীতি-এর সাথে জড়িত ছিলেন, আছেন বা হতে পারেন- এমন তথ্যও অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও ওই আইনের ৫ এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সঠিক তথ্য প্রকাশের কারণে তথ্য প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী বা দেওয়ানী মামলা বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, কোন বিভাগীয় মামলা দায়ের করা যাইবে না। ৫৷ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, তথ্য প্রকাশকারী কোন চাকুরীজীবী হইলে শুধু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশের কারণে তাহাকে পদাবনতি, হয়রানিমূলক বদলী বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা বা এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না যাহা তাহার জন্য মানসিক, আর্থিক বা সামাজিক সুনামের জন্য ক্ষতিকর হয় বা তাহার বিরুদ্ধে অন্য কোন প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাইবে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন অভিযানের তথ্য শেয়ার করে থাকেন। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত অপ্রদর্শিত সম্পদ উন্মোচনের অভিযান ফেসবুকে দেয়াটা দোষনীয় কিছু নয় বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া পরিচালক অভিযানের দিন তারিখ শেয়ার করেন নি তার ফেসবুক পেজে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, দুদক এর ওপর মহল নতুন বাংলাদেশের স্প্রিট বুঝলেও অসৎ উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করতে দুদক পরিচালককে সাইজ করেছেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাফিয়াদের যে হাত রয়েছে তাতে কি কোনো সন্দেহ রয়েছে?

না কোনো সন্দেহ নাই, কারণ, স্বৈরাচারের দোসর বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার্স কমিটির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ ফেসবুকে যে স্টাটাস দেন সেখানে তিনি কর্মকর্তাদের সেইফ ডিপোজিট ফ্রিজ করতে সম্মতি প্রদান করায় অর্থ উপদেস্টর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিলেন। এমনকি অর্থ উপদেস্টাকে অথর্ব বলেও উল্লেখ করেছিলেন। পরে গভর্নরকে ভুল বুঝিয়ে চাপ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে পত্র দিয়ে পরিচালকের বিরুদ্ধে নালিশ করেন।

এর ধারাবাহিকতায় ১০ ফেব্রুয়ারি দুদকের প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক আজিজুল হক সই করা আদেশ সুত্রে দুদকের পরিচালক থেকে সায়েমুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান NIS & UNCAC Focal point শাখার পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়৷ এছাড়াও এই সাহসী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এভাবে এসকে সুর গংয়ের তেলেসমাতিতে দুদক পরিচালক সাইজ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের থলের বিড়াল বের হওয়ার আশংকায় সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন কিছু অভিযোগ করে এভাবেই আওয়ামী দোসরেরা সফল হতে যাচ্ছেন। দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানকে উক্ত দায়িত্ব থেকে অপসারণের পর অন্য কাউকে দায়িত্ব দিলেও তিনি সাহসের সাথে কাজ করতে পারবেন না দুদকের নখ দর্পহীন ওপর মহলের চাপের কারণে। দুদকের পরিচালক যেমন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তেমনি সাহসী সৎ কর্মকর্তারাও মনোবল হারিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এখনও স্বৈরাচারের দোসর কুলাঙ্গারদের কবল থেকে কী দেশ ও জাতি মুক্তি পেয়েছে? অতিসত্বর এই দোসরদেরকে কঠোরভাবে দমনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকে আওয়ামী সমর্থিত নীল দল কীভাবে বিজয়ী হলো তা খতিয়ে দেখা জরুরী। ওদিকে এসকে সুর গংয়ের ন্যাক্কারজনক প্রতিশোধ বিচারও হওয়া জরুরী।
এ অবস্থায় দুদক কে দুর্নীতিবাজ ধরতে এবং সব দুর্নীতিবাজের জন্যে জিরো টলারেন্স কাজে লাগাতে দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানকে পুনরায় তাঁর দপ্তরে ফিরিয়ে নিয়ে একইভাবে দুদকের সকল বিভাগে সৎ সাহসী কর্মকর্তাদের কাজে লাগিয়ে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয় দেশের সকল ব্যাংকে রক্ষিত লকার খুলে অপ্রদর্শিত সম্পদ জাতির সামনে প্রকাশ করলে ড. ইউনূসের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হবে।