• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

২৩ বিলিয়ন ডলার উধাও! রপ্তানির হিসাব ওলটপালট-


প্রকাশিত: ৮:২৪ পিএম, ৭ জুলাই ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৭ বার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : হঠাৎ করেই পণ্য রপ্তানির হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে। তাতে হিসাবে থাকা ২৩ বিলিয়ন ডলার (গত দুই অর্থবছরের ২০ মাসে) উধাও হয়ে গেছে। তবে এই গরমিল ধরা পড়ার পর দায় এড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি তিনটি সংস্থাই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দায় চাপাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঁধে।

অন্যদিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে দায় এড়িয়েছে এনবিআরও। তবে এই গরমিলের আড়ালে অর্থপাচার এবং রপ্তানি না করেই রপ্তানি প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এতে টাকার অবমূল্যায়নেরও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

এনবিআর বলছে : বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির কর্মকর্তারা এনবিআরকে দায় দিয়ে বলছেন, এনবিআরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁরা রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা সরাসরি দায় নিতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, অনেক সময় স্যাম্পল পাঠানো, ডিসকাউন্টেড বা রিজেক্টেড পণ্য রপ্তানি থেকে বাদ না দেওয়ায় তা রপ্তানি হিসেবে গণ্য হয়। এটি কাস্টমসের হাতে নয়। কেননা রপ্তানি হলে ওই তথ্য এনবিআর প্রকাশ করে।

এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে থাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) বাইরের প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রিও রপ্তানি হিসেবে গণ্য হয়।তাঁরা আরো বলেন, এনবিআরের কাস্টমসে জনবল সংকট আছে। জনবলের ৮০ শতাংশের বেশির নজর থাকে মূলত আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে। ফলে রপ্তানি পণ্যের যথাযথ মনিটর করাটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। আমদানির মতো রপ্তানিতে সরাসরি রাজস্বসংশ্লিষ্টতা নেই।

তবে যে কারণেই হোক, রপ্তানির তথ্যে ব্যাপক এই ভুল হিসাব দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বহু হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশ করা তথ্য নিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

টাকা অবমূল্যায়িত হতে পারে : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কী কারণে এ রকম হয়েছে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক, ইপিবি তদন্ত করে দেখতে পারে। এতে অনেক হিসাব বদলে যাচ্ছে। ব্যালান্স অব পেমেন্ট নেগেটিভ হচ্ছে। আবার ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে ডলারের ওপর, টাকার অবমূল্যায়ন হবে। কম না, ২৩-২৪ বিলিয়ন ডলারের গরমিল।

প্রণোদনা না পাচার : গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই ভুলের আড়ালে কেউ প্রণোদনার সুবিধা কিংবা টাকা পাচার করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। এটি নিছকই পদ্ধতিগত ভুল, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু? দেখা উচিত এর মাধ্যমে কেউ সুবিধা নিয়েছে কি না। পুরো প্রক্রিয়া যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কাস্টম হাউসের তথ্যের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি। পদ্ধতিগত কারণে কাস্টম হাউসের তথ্যে একই রপ্তানি একাধিকবার দেখানোর (ডাবল বা ট্রিপল কাউন্টিং) ঘটনা ঘটেছে। আবার পণ্যের গুণগত মান বা অন্য কারণে কাস্টম হাউসের শিপমেন্ট বাতিলের পর আবারও রপ্তানির জন্য দুইবার গণনা করা হতো। এসব কারণে ইপিবির তথ্যে রপ্তানি বেশি দেখাচ্ছিল।

কেন মিলছে না রপ্তানির হিসাব : ইপিবির হিসাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চার হাজার ৫৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ওই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের। তাদের হিসাবে, ৯৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি কম হয়েছে।আর বিদায়ি অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে ইপিবির হিসাবে চার হাজার ৭৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের। তাদের হিসাবে রপ্তানি এক হাজার ৩৮০ কোটি ডলার কম।

বিদায়ি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস এবং এর আগের অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস মিলিয়ে মোট ২০ মাসে ৯ হাজার ৩১৪ কোটি ডলারের রপ্তানির তথ্য দিয়েছিল ইপিবি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ওই ২০ মাসে রপ্তানি হয়েছে ছয় হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সে হিসাবে দুই হাজার ৩৩৪ কোটি ডলারের কম রপ্তানি হয়েছে, যা ইপিবির হিসাবের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।