• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

২০১৬ সেনসেশন-সুইসাইডার জঙ্গি সাকিরা


প্রকাশিত: ৯:৩৮ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭৬ বার

এস রহমান  :  ২০১৬ সেনসেশন-সুইসাইডার জঙ্গি সাকিরা ২০১৬-বছরের আলোচিত চরিত্র ছিল ggggggggggনারী সুইসাইডার জঙ্গি।আলোচিত আত্মঘাতি ওই নারী জঙ্গির নাম ছিল সাকিরা। দেখা গেছে, বছরের প্রথম থেকেই শুরু হয় একের পর এক গুপ্তহত্যা। বছরের মাঝামাঝি এসে গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা এবং নৃশংসতার মধ্য দিয়ে চরমরূপে আবির্ভূত হয় আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি।

এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের বাড়ি ছেড়ে জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। সরকারি-বেসরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সপরিবারে অনেকের এই পথে যাওয়ার নতুন প্রবণতাও এ বছর দৃশ্যমান হয়। ঢাকার শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসক পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
gg
ক্লোজআপ ওয়ানের শিল্পী তাহমিদ সামীসহ আরও অনেকের সপরিবারে সিরিয়া যাওয়ার খবরও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণও।
এর আগে দেশের মানুষ জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়ংকর তৎপরতা দেখেছিল ২০০৪-০৫ সালে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা, তারপর কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)।

এর ১০ বছরের মাথায় ২০১৫ সালে সক্রিয় হয় দুই জঙ্গিগোষ্ঠী—আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী নব্য জেএমবি এবং আল-কায়েদা মতাদর্শ অনুসরণকারী আনসার আল ইসলাম। এর আগের বছরও কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ও পুরোনো জেএমবি। lady-militant-www-jatirkhantha-com-bd

তবে ২০১৫ সালে দুই জঙ্গি সংগঠন বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই বছর বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় দেশে নিহত হয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) ১১টি হামলার এবং আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) ৬টি হামলার দায় স্বীকার করে এ দেশে আলোচনায় আসে।

তবে সরকারের ভাষ্য, এসব আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কোনো সাংগঠনিক অস্তিত্ব এ দেশে নেই। দেশি জঙ্গিরা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যার ঘটনায় আনসার আল ইসলামকে এবং বিদেশি নাগরিক, ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের হত্যার জন্য নব্য জেএমবিকে দায়ী করে পুলিশ।gg

আইএস আছে কি নেই—এই বিতর্কের মাঝেই ২০১৬ সাল শুরু হয়। বছরের শুরুতেই ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহে ৮২ বছর বয়সী হোমিও চিকিৎসক ছমির আলীকে হত্যা করা হয়। খ্রিষ্টান ধর্মান্তরিত ছমির আলীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস। দেশের বিভিন্ন এলাকায় একে একে ২৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৫৫ জন।

এসব ঘটনার মধ্যে ১৭টির দায় স্বীকার করে আইএস। এর মধ্যে রয়েছে পুরোহিত, ভিক্ষু, যাজক, শিয়া ও আহমদিয়া সম্প্রদায় এবং বিদেশি নাগরিক হত্যা। পুলিশ বলেছে, দেশি জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।

২০১৬ সালে দুটি ঘটনার দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম, যারা নিজেদের একিউআইএসের বাংলাদেশ শাখা দাবি করে। তা হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নাজিমউদ্দিন হত্যা এবং কলাবাগানে বাসায় ঢুকে মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বীকে হত্যা। ২৫ এপ্রিল এই জোড়া খুনের পর এখন পর্যন্ত আনসার আল ইসলাম আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি।

জঙ্গি দমনে সেনা কমান্ডো-
১ জুলাই রাতে গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা, দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ওই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে। তার আগেই জঙ্গিরা নৃশংসভাবে হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। তার আগে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি ও হলি আর্টিজানের এক বাবুর্চি।

গুলশান হামলার পর জিম্মি সংকট চলাকালেই দেশি-বিদেশি নাগরিকদের রক্তাক্ত লাশ আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। ঘটনার পরদিন অভিযানে অংশগ্রহণকারী পাঁচ জঙ্গিকে নিজেদের ‘যোদ্ধা’ দাবি করে অস্ত্র হাতে তাঁদের ছবি ও সাংগঠনিক নাম প্রকাশ করে আইএস। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন ঢাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং তাঁরা লেখাপড়া করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে।

এরপর খবর বের হয় যে দেশের বেশ কিছু ছাত্র, তরুণ ও পেশাজীবী নিখোঁজ। তাঁদের অনেকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন। আবার সেনাবাহিনী থেকে আগাম অবসর নিয়ে মেজর জাহিদুল ইসলাম, ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর কাদেরী ও সফটওয়্যার প্রকৌশলী বাশারুজ্জামানের মতো ব্যক্তিরা পুরো পরিবার নিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা। তবে আইএসের অনলাইন ম্যাগাজিন রুমাইয়াতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে তাদের ‘খিলাফতের সৈন্য দলের’ প্রধান ছিলেন তামিম চৌধুরী।

জঙ্গিবিরোধী অভিযান: গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা তামিম চৌধুরীসহ ২৮ জন নিহত হন।
২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের এক অভিযানে নিহত হয় নয়জন সন্দেহভাজন জঙ্গি।

এরপর ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আরেক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন তামিম চৌধুরী। ২ সেপ্টেম্বর রূপনগরে অভিযানে মেজর (অব.) জাহিদ, ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে তানভীর কাদেরী নিহত হন। ৮ অক্টোবর গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায় র্যা ব ও পুলিশের পৃথক চার অভিযানে নিহত হন ১২ জন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের মতে, এখন জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। তারা লোকবলসংকটে পড়েছে।

সর্বশেষ আত্মঘাতী নারী-
২৪ ডিসেম্বর ঢাকার আশকোনায় এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় আত্মঘাতী হামলা চালান এক নারী। তার আগে ওই আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণ করেন মেজর (অব.) জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার ও জঙ্গি নারী সাকিরা। ওই আস্তানা থেকে পুলিশ ১৯টি তাজা বোমা ও চারটি পিস্তল উদ্ধার করে।