২০১৫ সালে ক্রসফায়ার ১৪৬
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৫ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে; কিন্তু কোনো বাহিনী আটকের কোনো অভিযোগ স্বীকার করেনি। আর বিভিন্ন বাহিনীর ‘ক্রসফায়ার’ ও হেফাজতে মারা গেছেন মোট ১৯২ জন। এর মধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ১৪৬ জন।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব সূত্রের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে আটজনের লাশ পাওয়া গেছে, পাঁচজন ফিরে এসেছেন আর সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে হেফাজতে ও ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন ১৯২ জন। এর মধ্যে র্যাবের ক্রসফায়ারে ৫০ জন, পুলিশের ক্রসফায়ারে ৭০ জন, র্যাব ও বিজিবির ক্রসফায়ারে একজন, র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে একজন, বিজিবির ক্রসফায়ারে একজন, আনসারের ক্রসফায়ারে একজন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্রসফায়ারে ১৪ জন, যৌথ বাহিনীর ক্রসফায়ারে দুজন ও সেনাবাহিনীর ক্রসফায়ারে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের নির্যাতনে সাতজন, গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে একজন, র্যাবের নির্যাতনে দুজন ও বিজিবির নির্যাতনে একজন মারা গেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে ২৫ জন, গোয়েন্দা পুলিশের গুলিতে একজন ও বিজিবির গুলিতে দুজন মারা গেছেন। এ ছাড়া থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন, পুলিশ হেফাজতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে দুজন এবং র্যাব হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর কারা হেফাজতে ৬৯ জন ও গণপিটুনিতে ১৩৫ জন মারা গেছেন।
রাজনৈতিক সংঘাত: এ বছর সারা দেশে ৮৬৫টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৫৩ জন আর আহত হয়েছেন ছয় হাজার ৩১৮ জন।
সাংবাদিক হয়রানি: ২০১৫ সালে সারা দেশে ২৪৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। এর মধ্যে সন্ত্রাসীর হাতে খুন হয়েছেন দুজন। প্রকাশিত সংবাদের জন্য মামলার শিকার হয়েছেন ১০ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতন, হুমকি, হয়রানি বা মামলার শিকার হয়েছেন ১৮ জন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাতে হামলা, হুমকি, নির্যাতন, হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৪ জন আর বিএনপির হাতে দুজন। সিটি ও পৌর নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ভীতি, হামলা ও বাধার শিকার হয়েছেন ৩৬ জন। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ২২ জন।
নারী নির্যাতন: ২০১৫ সালে অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৩৫ জন নারী, এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ১০ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাঁচ নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। এ ছাড়া ৩০৪ জন নারী-পুরুষ হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। সালিস ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২ জন নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৯৮ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ১৮৭ জন নারীকে আর যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন নারী। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৭৩ জন নারী, এর মধ্যে ২৭৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫৪ জন। এই বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৫২ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬০ জনকে। এ ছাড়া এ বছর ৬৩ জন গৃহপরিচারিকা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর মারা গেছেন সাতজন, রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: এ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০৪টি বাসস্থান ও ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং ২১৩টি প্রতিমা, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৬০ জন আহত হয়েছেন।
সীমান্ত সংঘাত: ২০১৫ সালে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩২ জন। নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৩ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ৫৯ জন। আর অপহরণের পর বিজিবির মধ্যস্থতায় ফিরে এসেছেন ৩১ জন।