‘২০১৩ সালে দেশ থেকে ৭০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা পাচার হয়েছে’
বিশেষ প্রতিবেদক : গত ২০১৩ সালে দেশ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৭০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, তখনকার হিসাবে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণের সমপরিমাণ ছিল এ অর্থ। অর্থপাচারের পেছনে দেশের মানুষের পাশাপাশি বাইরের কিছু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষও জড়িত ছিল।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের একমাত্র সোনালী ব্যাংক ছাড়া বাকি সব ব্যাংককে পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পরামর্শও দেন সাবেক গভর্নর।
সোনালী ব্যাংককে সরকারি খাতে রাখার যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে ট্রেজারির কর্মকাণ্ড রয়েছে। বিল-বন্ডের ব্যাপার রয়েছে। সে কারণে ব্যাংকটি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে থাকতে পারে।ফরাসউদ্দিন বলেন, দুর্নীতি শুধু সরকারি ব্যাংকে নয়, বেসরকারি ব্যাংকেও হয়।
অর্থপাচার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো চিহ্নিত করার ক্ষমতা আমাদের আমলাদের আছে। এ অর্থ দেশে থাকলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তো। এর জন্য অনুসন্ধানি প্রতিবেদনও দরকার।
শুক্রবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট রিপোর্টিং বিষয়ক এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরাসউদ্দিন এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির স্বার্থে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একজনের হাতে থাকা উচিত। বর্তমানে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন সময় যে বাদানুবাদ হয় তা আমাদের ভালো লাগে না। অতীতেও একই ব্যক্তির হাতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ছিল, সেটিই ভালো।’
সাবেক এ গভর্নর মনে করেন, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার না করে শনিবার ও রোববার করা যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে শুক্রবার অফিস করা হয়। অর্থবছর মে-জুনের পরিবর্তে জানুয়ারি থেকে শুরু করা ভালো হতো।
আইএমএফের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমানত ও সুদের ব্যবধান (স্প্রেড) বর্তমানে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি বেশির ভাগ ব্যাংক মানে না। এ সব ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ স্প্রেড যোগ করেও তাদের ইন্টারেস্ট রেট ৮ শতাংশের বেশি হওয়া উচিৎ না। এ নির্দেশনা কয়টা ব্যাংক মানে?
সাবেক গভর্নরের মতে, এটি আরও কমানো যেতে পারে। সাড়ে চারের মধ্যে নামিয়ে আনা যায়। কারণ বিশ্বব্যাপী আমানত ও সুদের ব্যবধান (স্প্রেড) মাত্র ৩ শতাংশ। যদিও আমাদের খেলাপি ঋণের কারণে স্প্রেড কমানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া তিনি বলেন, তেলের দাম কমানোর পক্ষে আমি নই। তবে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম কমানো যেতে পারে। কারণ দুটির তেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশের সাধারণ মানুষ।এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইআরএফের সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান।