• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

১৯ সন্ত্রাসীর নাইন ইলেভেন মিশন-


প্রকাশিত: ৯:২৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ১৮ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৭ বার

 

আন্তজার্তিক ডেস্ক রিপোর্টার : ১৯ সন্ত্রাসীর নাইন ইলেভেন মিশন-অবশেষে ফাঁস হয়েছে। জানা যোয়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকাল বেলায় ১৯ সন্ত্রাসী বোস্টনের লগান বিমানবন্দর থেকে ৪টি প্লেন অপহরণ করে। পশ্চিম উপকূলমুখী বিমানগুলো তারা বেছে নিয়েছিল, কারণ তাদের জ্বালানি সরবরাহের প্রয়োজন ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল ক্ষমতার তিনটি কেন্দ্রবিন্দু- ওয়াল স্ট্রিট, দ্য পেন্টাগন ও দ্য হোয়াইট হাউস ধ্বংস করে দেয়ার মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া।

প্রথম দুটি বিমান নিজেদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে। আমেরিকান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট-১১ সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার ওয়ানে আঘাত করে। ৯টা ৩ মিনিটে টাওয়ার টু’তে আঘাত হানে ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট-১৭৫। ১০টা ৫ মিনিটে লাখো মানুষ টেলিভিশনে দেখেছেন যে টাওয়ার টু ধসে পড়েছে।টাওয়ার ওয়ান শীর্ষ থেকে মাটিতে ধসে পড়ে ১০টা ২৮ মিনিটে। টাওয়ার সেভেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। আমেরিকান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট-৭৭ দ্যা পেন্টাগন ভবনে আঘাত করে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে এবং ১০টা ১০ মিনিটে ভবনটির আংশিক ধসে পড়ে।

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-৯৩ নিজের টার্গেট দ্য হোয়াইট হাউসে যেতে সমর্থ হয়নি। ৯টা ২৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ার পর বার্তা প্রেরক এড বেলিঙ্গার বার্তা পাঠিয়েছেন যে, ফ্লাইট-৯৩ সহ সবক’টি ফ্লাইট তিনি অনুসরণ করছিলেন।তিনি বলেছিলেন, ‘সতর্ক থাকুন, ককপিটে যে কোনো অনাহূত প্রবেশকারী অ্যাকাউন্ট ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করেছে’। এর ৫ মিনিট পর সন্ত্রাসীরা পাইলটদের হত্যা করে এবং প্লেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

ওই সময়ে অন্তত ১০ জন যাত্রী মোবাইল ফোনে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তারা ওয়ার্ল্ড ট্রেড টাওয়ারে হামলা সম্পর্কে শুনেছেন এবং নিজেদের ভাগ্যে সম্ভাব্য কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলেন। ৯টা ৫৭ মিনিটে সাহসী যাত্রীরা সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা করে। ফ্লাইট-৯৩ পেনসিলভানিয়ার শঙ্কসভিলে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয় ১০টা ৩ মিনিটে, এতে আরোহী ৩০ জনের সবাই নিহত হন।৯টা ১৭ মিনিটে দ্য ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন (এফএএ) নিউইয়র্ক সিটি অঞ্চলের সবগুলো বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়। প্রেসিডেন্ট বুশ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ঘোষণা করেন ৯টা ৩০ মিনিটে। ১০ মিনিট পর এফএএ ইতিহাসের প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করে।

৯/১১-বিভিষীকা- মর্মান্তিক ওই ঘটনায় মৃত্যুর সারি ২ হাজার ৯৭৫ জনে গিয়ে থামে, যা ১৯৪১ সালের পার্ল হারবারের মৃত্যু সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। মৃতদের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ জন ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের, ১২৫ জন পেন্টাগনের এবং ২৫৬ জন ছিলেন ৪টি বিমানের যাত্রী।ওই হামলার ঘটনায় মহামন্দার পর প্রথমবারের মতো শেয়ার মার্কেট চার কার্যদিবস বন্ধ ছিল। এর আগে গণহারে ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকদের টাকা তুলে নেয়া বন্ধ রাখার উদ্দেশ্যে ১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট দুই দিনের জন্য শেয়ার মার্কেট বন্ধ রেখেছিলেন।

চার দিন বন্ধের পর ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শেয়ার মার্কেট চালু হয়। তৎক্ষণাৎ দ্য ডো বা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের বৃহৎ ৩০টি কোম্পানির মার্কেট ইনডেক্স পড়ে যায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মার্কেট পয়েন্ট ৮ হাজার ৯২০ দশমিক ৭০’তে এসে বন্ধ হয় লেনদেন। ৬১৭ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট পড়ে যাওয়া ওই সময়ে একদিনে ডো’র সবচেয়ে বাজে পতন ছিল।

৯/১১-এর হামলা একই বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া ২০০১ সালের অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এটি অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে মোট অর্থনীতি ১ দশমিক ১ শতাংশ সঙ্কুচিত করে ফেলে; কিন্তু দ্বিতীয় কোয়ার্টারে তা আবার ২ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ে।দ্বিতীয় কোয়ার্টারে এসে হামলাটি অর্থনীতিকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ সঙ্কুচিত করে মন্দাকে বিস্তৃত করে।

দ্য ওয়াইটুকে বা ২০০০ সালের ভীতি ২০০১ সালের মন্দার কারণ। এটি ইন্টারনেট ব্যবসায় দ্রুতগতি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দ্রুত পড়ে যাওয়ার ঘটনাও তৈরি করে।যদিও অর্থনৈতিক মন্দা ২০০১ সালের নভেম্বরে কেটে যায়, তবুও যুদ্ধের হুমকিগুলো আরেক বছরের জন্যও ডো’র পতন ধরে রাখে। ২০০২ সালের অক্টোবরে এটি সর্বনিু পর্যায়ে পৌঁছে এবং ৭ হাজার ২৮৬ দশমিক ২৭-এ এসে থামে। সেটি ছিল চূড়া থেকে ডো’র সূচক ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ নেমে যাওয়া।

২০০৩ সালের ১১ মার্চ কিছুটা বেড়ে ডো’র পয়েন্ট ৭ হাজার ৫২৪ দশমিক ০৬-এ ওঠা পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে জানত না শেয়ার মার্কেট ইনডেক্স উঠে দাঁড়াবে কিনা। ২০০৩ সালের জুন পর্যন্ত বেকারত্ব বেড়ে চলা নিয়মিত হয়ে পড়েছিল, তখন এটি ৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। তা ছিল ওই মন্দার শীর্ষ চূড়া।

অতপর-সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ –
২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট বুশ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকানদের একটি যুদ্ধের প্রত্যাশা করা উচিত নয়; বরং আমরা সব সময় দেখেছি এমন যে কোনো যুদ্ধের মতো না হয়ে এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রচারণা’। তারপরই তিনি নিজের কাজে নেমে পড়েন।৯/১১ হামলার পরিচালাকারী সংগঠন আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করা ও বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেন বুশ। ওই যুদ্ধের প্রথম বছরে জরুরি যুদ্ধ তহবিলের জন্য কংগ্রেস ২৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আলাদা করে রাখে।

২০০৩ সালের ২১ মার্চ ইরাকে সেনা পাঠান প্রেসিডেন্ট বুশ। তিনি বলেছিলেন, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পেয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেন আল-কায়েদার সক্রিয়দের সাহায্য করছিলেন। ইরাক হামলার প্রথম বছরে কংগ্রেস জরুরি যুদ্ধ তহবিল হিসেবে ৩৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আলাদা করে রাখে।

এ দুটি যুদ্ধের (ইরাক ও আফগানিস্তান) ব্যয় বাড়ছিল। বুশের দুই দফা প্রেসিডেন্ট মেয়াদে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্যয় হয় ১ দশমিক ১৬৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থ প্রতিরক্ষা বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের বাড়তি ব্যয়ে যোগ করা হয়েছিল।প্রেসিডেন্ট ওবামা তার দুই মেয়াদে খরচ করেছেন ৮০৭ বিলিয়ন ডলার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ খাতে বাজেট দিয়েছেন ১৫৬ বিলিয়ন ডলার। এতে করে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ১২৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

বিশ্বমন্দা-
৯/১১ হামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল কীভাবে বর্ধিত প্রতিরক্ষা ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ছাড়া ঋণ হতে পারত ১৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা আরও কম। বর্তমানে সেটা আরও ২ ট্রিলিয়ন বেশি, ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার।যা দেশটির অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ছিল ১৮ দশমিক ৬২৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন করা জিডিপির ৭৭ শতাংশ ঋণ থেকে এখনও বেশি। অবশ্য প্রকৃত অবস্থা ১০৩ শতাংশ স্তর থেকে এটি অনেক ভালো।

২০০৮ সালের মন্দার পর দেশকে এগিয়ে নিতে কর্মপ্রেরণাদায়ক প্রকল্পের তহবিল পর্যন্ত কমাতে হয় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কারণে। এ সময় অনেক কম চাকরি তৈরি করা হয়েছে, যার অর্থ হল কর রাজস্ব কম হয়েছে এবং আরও ঋণ বেড়েছে। এর আরও অর্থ হল অবকাঠামো মেরামত ও প্রতিস্থাপনের তহবিলও কমাতে হয়েছে।

২০১১ সালে উচ্চমাত্রার ঋণ একটি সংকট তৈরি করে যখন ঋণ সর্বোচ্চ সীমায় ওঠার কারণে জাতীয় ঋণ কমানোর জন্য টি পার্টি রিপাবলিকানরা (ঋণ কমানোর পক্ষের অংশ) আন্দোলনে নামে। সামরিক ব্যয় কমানোর পরিবর্তে তারা স্বাস্থ্যগত সুবিধা তীব্রভাবে কমিয়ে আনার দাবি নিয়ে আসে। এটি প্রথমবারের মতো মানসম্মত ও নিুমানকেন্দ্রিক মার্কিন ঋণকে তুচ্ছকরণের দিকে নিয়ে যায়।

২০১৩ সালে আবারও তারা ঋণ বাড়াতে বা সরকারকে তহবিল সরবরাহ করতে অস্বীকার করে বসে। এতে করে সরকারি অফিস-আদালত ১৬ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কা তৈরি হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ঋণ পরিশোধে অসমর্থ হয়ে পড়ল কিনা। চাকরি তৈরির পরিবর্তে তারা কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপের ওপর জোর দেয়া শুরু করে।

এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিষ্প্রভ করে রাখে। মার্কিন ঋণ সংকট চলমান। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় পরস্পরকে ঋণ বাড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করে আসছে। কিন্তু কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকার সময় তারা উভয়ই নির্ধিদ্বায় ব্যয় করতে থাকে।