১৫ লাখের ছাগল-কান্ড’র মতিউর রিমান্ডে
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী জিজ্ঞাসা করেন, ‘মতিউর সাহেব, সেই ছাগলটি কোথায়?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘পিপি সাহেব, ছাগলটি আছে।’এজলাসে বিচারক উপস্থিত হওয়ার পর একপর্যায়ে ফারুকী বলেন, মাননীয় আদালত, এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী। এ জন্য তাঁকে এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছিল।
কোর্ট রিপোর্টার : ‘ছাগল–কাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান নিজের পরিবারের কেউ দুর্নীতিবাজ নন বলে আদালতে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাগল–কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ ছিল। বুধবার ১৫ জানুয়ারী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ কথা বলেন মতিউর রহমান। বিকেল পাঁচটার দিকে মাইক্রোবাসে করে আদালতে আনা হয় তাঁকে। এর আগে আজ সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে মতিউর ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এরপর আলোচনায় আসেন মতিউর। তখন তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মতিউরকে বিকেলে আদালতে আনার পর রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। ২৫ মিনিট পরে তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে নেওয়া হয় এজলাসকক্ষে। মতিউর যখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জিজ্ঞাসা করেন, ‘মতিউর সাহেব, সেই ছাগলটি কোথায়?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘পিপি সাহেব, ছাগলটি আছে।’
এজলাসে বিচারক উপস্থিত হওয়ার পর একপর্যায়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, মাননীয় আদালত, এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী। এ জন্য তাঁকে এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছিল। তিনি এনবিআরের সদস্যও ছিলেন। গত কোরবানির ঈদে তাঁর ছেলে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনেছিলেন। কিন্তু এনবিআরের একজন সদস্যের কত টাকা বেতন?
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে আরও বলেন, মতিউরের ছেলের ছাগল–কাণ্ড আলোচিত হওয়ার পর দুদক তাঁদের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। মতিউর, তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আদালতে এ বিষয়ে কথোপকথন চলার একপর্যায়ে মতিউর বলেন, ‘ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।
বিচারক এজলাসকক্ষে বসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, মতিউর রহমানের বাসায় অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পিপি বলেন, মতিউর রহমানের বাসায় একটি অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। একটি শটগান, যার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, তিনি এর নবায়ন করেননি। অস্ত্র আইন অনুযায়ী, এটি এখন অবৈধ। ওই অস্ত্রের ২৫টি গুলির মধ্যে ১টি গুলির কোনো হিসাব তিনি দিতে পারেননি। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
পিপির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর মতিউর রহমানের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁর মক্কেল মতিউরের যে অস্ত্রকে অবৈধ অস্ত্র বলা হচ্ছে, সেটি আসলে অবৈধ অস্ত্র নয়, এটি বৈধ অস্ত্র। কিন্তু মতিউর রহমান ভুল করে এই অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করেননি। অস্ত্র আইন অনুযায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্স যদি নবায়ন না করা হয়, তাহলে জরিমানা দিলে সেটি নবায়ন করা সম্ভব। সুতরাং তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো যুক্তি নেই। তিনি আরও দাবি করেন, মতিউর শটগান কেনার পর একটি গুলি ‘মিস ফায়ার’ করেছিলেন।
মতিউর রহমান মেধাবী ছাত্র ছিলেন উল্লেখ করে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী। এই অভিযোগ সত্য নয়। তাঁর মক্কেল একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি মাধ্যমিকে যশোর বোর্ড থেকে স্ট্যান্ড করেছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। চাকরিতেও তিনি ভালো করেন। এনবিআরে থাকা অবস্থায় রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন।
এ বিষয়ে মতিউর রহমান আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার যে মামলাটি দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আমি বলতে চাই, আমার অস্ত্রটি বৈধ। আমার ভুল হয়েছে, অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।’
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সব বক্তব্য শুনে ভাটারা থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় মতিউর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আরেকটি আদালত। ১৯ জানুয়ারি আদালতে তাঁর রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।