১৫০০ কোটি টাকা লুটপাটে সাইজ হচ্ছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ লুটেরা
এস রহমান: সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তা ১৫০০ কোটি টাকা লুটপাটে সাইজ হচ্ছে।হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির নন-ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধানে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পরিচালক ও এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী আজ সোমবার তাঁদের এ নোটিশ পাঠান।
দুদক সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর পাঠানো চিঠিতে ওই ১০ জন কর্মকর্তাকে আগামী ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
এদের মধ্যে ব্যাংকটির নারায়ণগঞ্জ শাখার এভিপি মো. নুরুল আলম, এফএভিপি গাজী মো. নাজমুল আলম ও মো. শাহীন হোসেন, সিনিয়র অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান এবং গোপালদী শাখার এসএভিপি মো. রেজাউর রহমানকে ২৪ জানুয়ারি হাজির হতে বলা হয়েছে।
২৫ জানুয়ারি হাজির থাকতে বলা হয়েছে ব্যাংকের বংশাল শাখার ভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক মো. তাহির-উজ-জামান, একই শাখার এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার আহাম্মদ আজিম, সিনিয়র অফিসার রুবাইয়াত আনা, রোকেয়া সরণি শাখার এফএভিপি মো. সফিউল্লাহ ও দনিয়া রসুলপুর শাখার সিনিয়র অফিসার সাইফুল কবীর আহমেদকে।
এর আগে গত ১০ ও ১১ জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বেই আট সদস্যের একটি দল প্রায় দুই বছর আগে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করে।
দুদক সূত্র জানায়, হল-মার্কসহ ছয়টি কোম্পানি সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এ কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে ২০১২ সালে।
এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের পরিশোধ করা ফান্ডেড ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধান শেষে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর হল-মার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ূন কবির, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ডিজিএম এ কে এম আজিজুর রহমানসহ ২৭ জনকে আসামি করে ১১টি মামলা করে দুদক।
হল-মার্কের এমডি তানভীরসহ কয়েকজন আসামি বর্তমানে কারাগারে। এ কে এম আজিজুর রহমান মারা গেছেন। এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। ৩৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাকি পাঁচ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ২৭টি।
কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে হল-মার্ককে মালামাল সরবরাহের নামে নন-ফান্ডেড দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে দীর্ঘ দুই বছর পর শুরু হয়।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানটির (হল-মার্ক) নামে বিপুল পরিমাণ অর্থছাড়ের পাশাপাশি পণ্য সরবরাহের নামে কিছু বিলের বিপরীতে ৩৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও অর্থ তুলে নেওয়া হয়। বিলগুলোর বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ওই সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে হল-মার্কের নামে যে পরিমাণ অর্থছাড় হয়েছে, সেটা ফান্ডেড। আর এ প্রক্রিয়ায় অন্য ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের কাছে যা পাবে, তা নন-ফান্ডেড। সোনালী ব্যাংকের তদন্তে নন-ফান্ডেড অংশের দেড় হাজার কোটি টাকার বিপরীতে মোট ২ হাজার ১৮৬টি বিল জাল-জালিয়াতিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব বিলের বিপরীতে ৩৭টি ব্যাংকের ১১০টি শাখা থেকে তুলে নেওয়া করা হয়নি, যা সোনালী ব্যাংকের জন্য নন-ফান্ডেড।