১২শ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম কার্যত বন্ধ
স্টাফ রিপোর্টার: ১ জুন ২০১৪: হত্যা মামলা নিসরনে চিকিৎসকরা যথাযথ সহযোগিতা না করার অভিযোগ উঠেছে। কারণ হত্যা মামলা প্রমাণের জন্য আদালতে চিকিৎসকের সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাক্ষ্য ছাড়া মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায় না। ফলে বিচারকদের পক্ষে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালত বার বার চিকিৎসকদের তাগিদ দিলেও তারা তা আমলেই নিচ্ছেন না। এ কারণে বর্তমানে সহস্রাধিক হত্যা মামলার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকদের সহযোগিতার অভাবে ঢাকার ২৮টি আদালতে ১২শ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। ১ হাজার ৯৮৮টি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে হাজির না হওয়ায় ১২শ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গত ৩৭ বছর ধরেই এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে চলেছে ঢাকার ২৮টি নিম্ন আদালত। কিন্তু এসব গ্রেফতারি পরোয়ানাকে তোয়াক্কা না করে নির্বিঘেœ চিকিৎসক সাক্ষীরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অথচ হত্যা মামলাগুলোতে চিকিৎসকদের সাক্ষ্য অপরিহার্য। তারা আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত এসব হত্যা মামলা শেষ করা যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু চিকিৎসকদের কারণেই ন্যায়বিচার থেকে নিহতের স্বজনরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার জন্য সব সমন জারির আবেদন করেন। পুলিশ কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত সব সাক্ষীকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। সময় পেয়ে শতকরা ১০ ভাগ চিকিৎসক আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। বাকি ৯০ ভাগ সাক্ষী চিকিৎসকই আদালতে হাজির হন না। এ কারণে আদালত এসব সাক্ষীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রথমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং তা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ পরোয়ানাগুলো তামিল করে না। এতে চিকিৎসকরা আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। পরে আদালত চিকিৎসক সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তারপরও তারা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে হাজির হন না। পুলিশও তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করছে না। ফলে একদিকে যেমন আদালতে মামলাজটের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে ন্যায়বিচার। যদিও নীতিগতভাবে চিকিৎসকরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য। পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে সব সাক্ষীর নাম ও স্থায়ী ঠিকানা লেখা থাকে। কিন্তু যখন সাক্ষী হিসাবে কোনো চিকিৎসকের নাম আসে তখন শুধুমাত্র তার নাম ও হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা হয়। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট সাক্ষী যে হাসপাতালে চাকরি করতেন সেই ঠিকানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় পরোয়ানা সংক্রান্ত চিঠি তার হাতে পৌঁছে না। যদিও দণ্ডবিধির ১৭২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি সমন, নোটিশ ও আদেশ বিচারলয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বা প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য কিংবা দলিল দাখিলের জন্য হয় এবং কোনও ব্যক্তি যদি তা এড়ানোর উদ্দেশ্যে আত্মগোপন করে তবে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর সাক্ষ্য আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে- রোগ ও মৃত্যুর কারণ, বিষপানের ফলাফল, জখমের ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে চিকিৎসকদের মতামত সব সময় গ্রহণীয়। তবে চিকিৎসকের লিপিবদ্ধ মতামত নয় বরং আদালতে সাক্ষী অধিকতর মূল্যবান।