• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

১১ শহীদের রক্ত বৃথা যাচ্ছে কেন?


প্রকাশিত: ৩:২৮ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ১৭ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৮ বার

পাবনা প্রতিনিধি :   ১১ শহীদের রক্ত বৃথা যাচ্ছে কেন পাবনায় ? পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চর 11.freedomfighter-www.jatirkhantha.com.bdআশুতোষপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নির্মম হত্যার শিকার ১১ শহীদের পরিবার আজও সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পায়নি। এমনকি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও তাদের খোঁজ খবর নেয়নি কেউ। নিহতদের পরিবারের অনেকেই বর্তমানে ঝিঁয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

এলাকায় সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানায়, ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসে মাঝ নদীতে নিয়ে  ১১ জনকে এক সাথে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।
ওইদিন আশুতোষপুর গ্রাম থেকে সকাল ১১ টায় ১৩ জন নৌকাযোগে পাবনা শহর তলীর পাশে হাজির হাটে যায়।

এরপর হাটের কাজকর্ম শেষ করে তারা বিকেল ৩ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে তাদেরকে আটক করে পাকবাহিনী। ওইদিনই পাক হানাদাররা রাত ১২টার দিকে তাদের গুলি করে হত্যা করে হাজির হাটের দক্ষিণে (যেটাকে নদীর কোল বলা হয়) মাঝ নদীতে নিয়ে ফেলে দেয়।

এ সময় তাদের সাথে থাকা ২ শিশুকে ছেড়ে দেয় পাকবাহিনী। পরদিন সকালে এলাকার লোকজন ১১ জনের লাশ উদ্ধার করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।পাকবাহিনীর হাতে ওইদিন নিহতরা হলেন, কফেজ উদ্দিন শেখ, মাহাম শেখ, আজগর আলী শেখ, কুটু খাঁ, কুরান শেখ, কামাল মালিথা, গুলাই শেখ, আমোদ আলী মোল্লা, তাছের ব্যাপারি, নদু সরদার, হোসেন মন্ডল।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মকসেদ আলী জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার শার্ট গেঞ্জি পড়াবস্থায় প্রতি হাটের দিনের মত তারা ১৩ জন কেনাকাটার জন্য সকালে হাজির হাটে আসেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আলী আকন্দকে পাবনা হাজির হাট এলাকায় হত্যা করার জন্য অভিযান চালায় এবং বন্দুকের গুলি না বের হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা এদিক সে দিক চলে যায়। পরে রাজাকার বাহিনী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়। এরপর ওই ১১ জনকে ধরে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকবাহিনী।

শহীদদের মধ্যে ৫ জনের স্ত্রী বর্তমানে বেঁচে আছেন। তারা সবাই বৃদ্ধা বয়সে মানুুষের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে দিন যাপন করছেন। এরা হলেন-আমোদ আলী শেখের স্ত্রী সুন্দরী বেগম (৮৫), কালাম মালিথার স্ত্রী সাইসুনা খাতুন (৭৮), হোসেন মন্ডলের স্ত্রী খোদেজা খাতুন (৭৯), নদু শেখের স্ত্রী জয়দা খাতুন (৮৫), কুরান শেখের স্ত্রী ছামিরন বেগম (৮৬)।

শহীদ গুলাই ব্যাপারির মেয়ে জাহানারা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। দেশের বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যখন ব্যাপক সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন, সেখানে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া তো দুরের কথা আমাদের খোঁজ খবর পর্যন্ত কেউ নেয়নি।

এ সকল শহীদদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের দূঃখ দূর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।