১০ মনিপুরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরম শর্মিলার ১৫ বছর অনশন
বিবিসি অবলম্বনে দিল্লি থেকে টিপু সুলতান: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের মানবাধিকার কর্মী ইরম শর্মিলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অনশন প্রতিবাদ চালিয়ে আসছেন, আজ তার পনেরো বছর পূর্ণ হল।দু’হাজার সালের নভেম্বরে ইম্ফলে আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে ১০জন মনিপুরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শর্মিলা তার অনশন শুরু করেন, দাবি জানান মণিপুর থেকে সেনাবাহিনীর জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
৪২ বছর বয়সী শর্মিলা এখনও তার প্রতিবাদে অটল, যদিও নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে জোর করে খাইয়ে তাঁকে এখনও বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।ওদিকে মণিপুর থেকেও এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি ওই বিতর্কিত আফপ্সা আইন।ইরম শর্মিলা যখন মণিপুরে তাঁর অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন, তখন তিনি মাত্র সাতাশ বছর বয়সী একজন তরুণী।
গত পনেরো বছরে তিনি একবারের জন্য স্বাভাবিকভাবে কোনও খাবার খাননি – আদালতের নির্দেশে সরকার তাঁর নাকে নল ঢুকিয়ে জোর করে তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে।এর মাঝে বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে – দিল্লির আদালতে হাজিরা দিতেও বারবার তাঁকে টেনে আনা হয়েছে, কিন্তু তিনি আত্মহত্যার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন।
শর্মিলার প্রতিবাদের মূল কথাটি হল, মণিপুরে সেনাবাহিনীর জন্য যে বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফপ্সা বলবৎ আছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।এই আইনের সুবাদেই সেনা বা আধাসামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও তারা আদালতে পার পেয়ে যান।
ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, যতদিন মণিপুরে সেনা বা আধা-সেনা মোতায়েন থাকবে ততদিনই ওই রাজ্যে আফপ্সাও বহাল রাখতে হবে, কারণ এই আইনটাই তাদের একমাত্র ‘লিগাল কভার’ বা আইনি রক্ষাকবচ।কিন্তু ত্রিপুরার মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে আফপ্সা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে সেখানে কি মণিপুরে আজও এই বিতর্কিত আইন চালু রাখার কোনও প্রয়োজন আছে?
জেনারেল রায়চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন প্রয়োজন নেই। কিন্তু আফপ্সা যদি সরিয়েই নিতে হয়, তাহলে মণিপুর থেকে সমস্ত আধাসামরিক বাহিনীকেও সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নিতে হবে বলে তাঁর অভিমত।কিন্তু যেহেতু এখনও মণিপুরে আসাম রাইফেলস নিয়োজিত আছে – তাই সেখানে চালু আছে আফপ্সা, আর সেই সঙ্গে অব্যাহত আছে ইরম শর্মিলার প্রতিবাদও।
সরকার যুক্তি দিয়ে থাকে, মণিপুরে সক্রিয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির মোকাবিলা করতেই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন – যদিও ইম্ফলে হিউম্যান রাইটস অ্যালার্টের বাবলু লয়টংবাম তা মানতে রাজি নন।তিনি বলছেন, “জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আপনি আরও বড় জঙ্গি হয়ে উঠতে পারেন না।”