১০ জানুয়ারী শোডাউন- পাহাড়ে রাজনীতির উত্তাপ জেএসএস পক্ষে বিএনপি
জুয়েল.পার্বত্য চট্টগ্রাম: পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে আগামী ১০ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দিয়েছে জেএসএস সহযোগী ছাত্র সংগঠান পিসিপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে এদিন শক্তি পরীক্ষায় নামছে জেএসএস। এ অবরোধকে প্রতিহত করতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সমন্বয় করে জেএসএসের আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি চাচ্ছে ইউপিডিএফ আর নতুন দাবির কথা ভাবছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। এ নিয়ে বেশ জমে উঠেছে পাহাড়ের রাজনৈতিক অঙ্গন। এই অবরোধ নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে পাহাড়ের আনাচ-কানাচে।
১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তির পর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) এ ধরনের কর্মসূচি তেমন চোখে পড়েনি পার্বত্যবাসীর। পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত অবরোধকে নিজেদের কর্মসূচি মনে করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জেএসএস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেএসএস নেতাদের প্রচারণা আর জেলা, উপজেলার সাংগঠনিক তৎপরতার ছবিগুলো তাই বলে দিচ্ছে।
জেএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো এ কর্মসূচিকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দেয়ায় আগামী ১ মে থেকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তু লারমার অসহযোগ আন্দোলন ডাকের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা হচ্ছে। সন্তু লারমা গত ৩০ নভেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ ১৮ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
জেএসএস কেন্দ্রীয়সহ তথ্য প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, পিসিপি যে কর্মসূচি দিয়েছে তার যুক্তি আছে। তাই এই কর্মসূচি এবং তাদের আগামী কর্মসূচিতেও জেএসএসের প্রত্যক্ষ সমর্থন থাকবে।
এ কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, পিসিপির অবরোধ প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ সেদিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে থাকবে। সরকারি দলের এ ঘোষণায় বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে জেএসএস ও সহযোগী নেতাকর্মীদের মাঝে। কারণ এ আন্দোলনে কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয় জেএসএস।
জেএসএসের সাংগঠনিক অবস্থা খাগড়াছড়ি জেলায় দুর্বল হলেও রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে বেশ শক্তিশালী। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদীয় আসনটি ছিনিয়ে নেয় তারা। পরবর্তী উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের আসনগুলোও ছিনিয়ে নেয়। পেশিশক্তি, কৌশল সব মিলিয়ে রাঙ্গামাটিতে জেএসএসের কাছে পরাজিত আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় অবরোধ প্রতিহতের ঘোষণায় কতটা সাড়া মিলবে তার জন্য এখন সবার নজর ১০ জানুয়ারির দিকে।
এদিকে পাহাড়ের অন্যতম আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) বক্তব্য পরিষ্কার। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে ইউপিডিএফের শুরু থেকে বিরোধিতা ছিল। এখনো আছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক নিরণ চাকমা বলেন, জেএসএস পিসিপি যে কর্মসূচি দিয়েছে তা আরো আগে দেয়া উচিত ছিল।
এ আন্দোলন অব্যাহত থাকুক এটি ইউপিডিএফ চায়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এ কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। ইউপিডিএফের সঙ্গে সমন্বয় করে যদি কর্মসূচি দেয়া হতো তাহলে এ আন্দোলন আরো শক্ত হতো। আমরা সমন্বয়ের আশা করছি। একদিনের অবরোধ দিয়ে সরে গেলে হবে না। আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
জেএসএস সমর্থিত পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্যোতিষ্মান চাকমা বলেন, ১ দিনের অবরোধ দেয়ার পরও সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে লাগাতার অবরোধ-হরতাল দিয়ে পিসিপি মাঠে থাকবে। এবার ডাইরেক্ট অ্যাকশন হবে।
মেডিকেল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, মেডিকেল কলেজে এবার পার্বত্য এলাকার ছেলেমেয়েরা তেমন অগ্রাধিকার পায়নি। ভবিষ্যতে যেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় সেজন্য শিগগিরই তারা সংবাদ সম্মেলন করবে বা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবে। আগামী ১০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজে ক্লাস শুরু হবে। সেদিন শিক্ষার্থীদের তারা অভিনন্দন জানাবে।
রাঙ্গামাটি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, আমরা নিয়ে প্রথম থেকে মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নের দাবির যে আন্দোলন করেছি তা কিছুটা ভুল ছিল। আমাদের উচিত ছিল শিক্ষার্থী ও চাকরি কোটা বৃদ্ধি করা। কিন্তু তা হয়নি। কারণ আমাদের পাহাড়ে যে শিক্ষা ব্যবস্থা সে হিসেবে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না।
রাঙ্গামাটি সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, মেডিকেল কলেজ আমাদের স্বপ্নের বিষয় ছিল। ক্লাস শুরুর মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটিকে স্বাগত জানানো দরকার। কারোর মতবিরোধ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করলে উত্তম হবে। কলেজে বর্তমানে ২৫ ভাগ কোটা সংরক্ষণ হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে তা ৫০ ভাগ করা যায়।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার মান, অবকাঠামো উন্নয়নসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান চায় না আন্দোলনকারীরা। এসব নিয়ে বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ের রাজনীতি। এ নিয়ে জনমনে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা সবাই তাকিয়ে আছেন ১০ জানুয়ারির দিকে।