• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

১লা বৈশাখে সাজ্জাদ কাদিরের আড্ডা কবিতা গান আর হলোনা!


প্রকাশিত: ১:৫৫ এএম, ৭ এপ্রিল ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৯ বার

স্টাফ রিপোর্টার  :  ১লা বৈশাখে সাজ্জাদ কাদিরের আড্ডা কবিতা গান আর হলোনা!  আর কয়েক দিন পরেই বাংলা নববর্ষ। নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে রাজধানীসহ সারা দেশে। নববর্ষকে ঘিরে পরিকল্পনা ছিল সদ্য প্রয়াত কবি সাযযাদ কাদিরের। কিন্তু পয়লা বৈশাখের মাত্র সাSazzad_Qadir-www.jatirkhantha.cim.bdত দিন আগে তিনি বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে।

গত ৪ এপ্রিল এই কবি ও সাংবাদিক ফেসবুকে স্ট্যাস্টাসে লিখেছিলেন, ‘এবারের ১লা বৈশাখ কাটাবো আড্ডা, কবিতা, গান, আবৃত্তিতে… রাজধানীর উপকণ্ঠ বেরাইদ-এ…’। এমনকি পোস্টের একটি কমেন্টসে তিনি লিখেন, ‘এবার আষাঢ়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল রাজশাহীতে।’ কিন্তু কবির এই দুটো ইচ্ছাই অপূর্ণ রয়ে গেল। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার মাত্র দুই দিন পরেই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা যান তিনি।

কবি সাযযাদ কাদিরের বৈশাখপ্রীতি অনেক পুরনো।সম্প্রতি তিনি এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘বৈশাখ এলে মনে পড়ে আমার সাত-আট বছর বয়সের জীবনটাকে। ওই জীবনে আমাদের বাড়ির, গাঁয়ের বাড়ির আর মামার বাড়ির সবাই ছিলেন আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের আদেশ-উপদেশ মেনে চলার পাশাপাশি তাঁদের নজর এড়িয়েও চলেছি অনেক। সেই এড়িয়ে চলার জীবনটাতেই ছিল যত মজা’।

নিজের ছোটবেলার বৈশাখ সর্ম্পকে এই কবি আরো লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়ি টাঙ্গাইল শহরে, গাঁয়ের বাড়ি দেলদুয়ারে, মামার বাড়ি মিরের বেতকায়। শহর থেকে দক্ষিণ-পূবে দেলদুয়ার ১২ কিলোমিটার দূরে। মিরের বেতকাও দক্ষিণ-পূবে। তবে শহরের উপকণ্ঠে, দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।

তখনও যমুনা নদীকে শাসাতে বন্যারক্ষা বাঁধ হয়নি, আমরা ছ’মাস শুকনায় আর ছ’মাস ডুবে থাকতাম। দেলদুয়ার-মিরের বেতকা শুকনাকালে যেতাম টমটমে, আর বর্ষা কালে যেতাম নৌকায়। আমাদের ঘুম-ঘুম শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত লৌহজঙ্গ নদী। বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠলেও বৈশাখে সত্যিই হাঁটুজল নিয়ে হয়ে পড়ত আঁকেবাঁকে বয়ে চলা ছোট নদী।

সেই সময়ে আমার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের বিন্দুবাসিনী স্কুল, আর আমাদের আকুরটাকুর পাড়া। বৈশাখ এলে আমরা স্কুলে পেতাম সামার ভ্যাকেশন অর্থাৎ গ্রীষ্মের ছুটি, আর পাড়ায় পেতাম একে-একে কয়েকটি মেলা। পাড়ার সবচেয়ে বড় মেলা ছিল, এখনও আছে, ‘মদনার মায়ের মেলা’বা ‘মদনার মেলা’। সেই মদনা বা মদনার মা কে ছিলেন তা জানতে পারিনি অনেককে জিজ্ঞেস করেও, তবে ছোট কালীবাড়ি নামে পরিচিত পূজাবাড়ি ঘিরে ছিল যাবতীয় আয়োজন।

পাড়ায় আমাদের বাড়ির লাগোয়া কোকিলার বাড়িকে ঘিরে ছিল ‘বুড়ির মেলা’। সে মেলা নেই এখন। কোকিলারাও নেই। পাশের পাড়া সাবালিয়ায় হরি পাগলার মেলা হয় এখনও। এই তিন মেলা নিয়ে ছিল আমাদের সারা বছরের নানা আগ্রহ-উদ্দীপনা। মদনার মায়ের মেলা হয় বৈশাখের প্রথম রবিবারে, হরি পাগলার মেলা পরের রবিবারে। বুড়ির মেলা হতো আরও পরে। তবে আমার মেলা উদযাপন শুরু হতো বৈশাখের আগেই, চৈত্রের শেষে। মামাবাড়ি মিরের বেতকার দক্ষিণে নদীপাড়ের গাঁ গাড়াইলে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা দিয়ে উদ্বোধন হতো আমার এবং আমাদের গোটা এলাকার গ্রীষ্ম-উৎসবের।’

বৈশাখের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। তাই জাতীয়ভাবে বৈশাখের আয়োজন পেতে যাচ্ছে ভিন্ন মাত্রা। কিন্তু কবি সাযযাদ কাদিরের বেয়াইদে আড্ডা দেওয়া হবে না। সাযযাদ কাদিরের শূন্যতা অনুভব করবে বাড্ডার বেয়াইদ জনপদ। শূন্যতা অনুভব করবে পয়লা বৈশাখও।