• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সে লুটপাট-১০৪ কোটি লুটের পর ৫ ভুয়া পরিচালকের জালিয়াতি


প্রকাশিত: ১০:৪৭ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : হোমল্যান্ড লাইফে গ্রাহকের জমা করা টাকা থেকে লুট করা হয়েছে ১০৪ কোটি টাকার এখনো কোনো কিনারা হয়নি। এ লুটপাট হয়েছে ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সালে। আর এ লুটপাটে জড়িত স্বয়ং কোম্পানির মালিকরাই। এসব ঘটনার মাঝে এবার পাঁচ লন্ডন প্রবাসী ভুয়া শেয়ারে ১৭ বছর ধরে বীমা কোম্পানির পরিচালক হয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লভ্যাংশ, বোর্ড মিটিং ফি, ঢাকা-লন্ডন আসা যাওয়ার বিমান ভাড়াসহ কোটি কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ঐ পাঁচ প্রবাসীর দাবি করা সব শেয়ার সার্টিফিকেটই জাল। ব্যাংকে বন্ধক থাকা অন্য এক পরিচালকের শেয়ার জালিয়াতি করে তারা নিজেদের নামে দেখিয়েছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে ২৬ বছর ধরে ব্যবসা করছে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স । এই কোম্পানিতে ১৭ বছর ধরে পরিচালনা পর্ষদে আছেন লন্ডন প্রবাসী জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ ও জামাল উদ্দিন।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে বর্তমানে ১৯ জন ডিরেক্টর। এর মধ্যে ৯ জন থাকেন লন্ডনে।এরিমধ্যে দুই পরিচালক আব্দুল হাই ও আব্দুল আহাদের শেয়ার সার্টিফিকেট রহস্যজনকভাবে একই দিনে হারিয়ে যায়। দিনটি ছিলো ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ঘটনার দেড় বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে থানায় জিডি করেন দুই ভাই।

হোমল্যান্ড লাইফের লন্ডন প্রবাসী অপর দুই পরিচালক জামাল মিয়া ও কামাল মিয়া। তাদের কোম্পানির মালিকানার শেয়ারগুলোও একই দিনে হারিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১০ মে তাদের শেয়ার হারালেও সিলেটের বালাগঞ্জ থানায় তারা জিডি করেন ঘটনার ১৫ দিন পর। প্রবাসী আরেক পরিচালক জামাল উদ্দিনেরও ১০ হাজারটি শেয়ার সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় ২০১৪ সালের মে মাসে। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১২ মে একই দিনে একই পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দেন ঐ পাঁচ প্রবাসী পরিচালক।

অভিযোগ করা হয়েছে, জামাল মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল ওহাব, আব্দুল হাই ও জামাল উদ্দিনের নামে একটিও শেয়ার ছিলো না। এ কারণে অরিজিনাল শেয়ার হারানোর নাটক সাজান এই পাঁচ পরিচালক।
কথিত পাঁচ পরিচালকের সবগুলোর শেয়ারের আসল মালিক; কোম্পানির আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ। যিনি নিজের ৮০ হাজার শেয়ার ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংক ও বর্তমানের আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন।

আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের প্রশাসন ও রিকভারি প্রধান ক্যাপ্টেন (অব:) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মোট ৮০ হাজার শেয়ার, যার মূল্য ৮০ লাখ টাকা আমাদের ভল্টে অর্জিনাল কপি আছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে ওই ৫ লন্ডনীর শেয়ার সার্টিফিকেট পরীক্ষা করা হলোনা কেন? সার্টিফিকেটের আসল কপি না থাকার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? তাহলে কি এখানে কেউ মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে কলকাঠি নেড়ে নিজে ফায়দা লুটেছে এবং জাল সার্টিফিকেটধারীদের সুবিধা বাগিয়ে দিয়েছে। আর এটা যথাযথ তদন্ত না করায় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ যেমন দায়ি তেমনি এই প্রতিষ্ঠানের এমডিও নিজেকে সন্দেহমুক্ত করতে পারেন না বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন একাধিক বীমা ব্যক্তিত্ব।
যদিও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল মিডিয়াকে বলেছেন, ২০২২ সালে আমি জয়েন করার আগের বিষয়ে আমি অবহিত না।এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ঐ ৫ পরিচালকের হয়ে কথা বলেন আরেক লন্ডন প্রবাসী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ব্যাংকে যে শেয়ার রাখা হয়েছে- তা আমাদের জানা নেই।শেয়ার কেনা বেচার ওয়ান ওয়ান সেভেন ফর্মগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে।