হুদা কমিশনকে বিতর্কিত করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি : হুদা কমিশনকে বিতর্কিত করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন বুধবার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু মানুষের ব্যাপক আগ্রহের মধ্যে গঠিত এ কমিশন শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়েছে। এর নেপথ্যে বিএনপি সরসরি মাঠে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনায় এবং গণমাধ্যমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা নতুন কমিশনকে নিয়ে বিতর্কে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। আর এই বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অতীত কর্মজীবন সামনে এনে এরই মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। বিএনপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে তার নিয়োগ ঐক্যমতের ভিত্তিতে হয়নি। ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা নুরুল হুদা চাকুরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার ডিসি ছিলেন। বিএনপি আমলে ওএসডি ও যুগ্মসচিব পদে বাধ্যতামূলক অবসরে যান তিনি।
পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আদালতের রায় ভুতাপেক্ষভাবে কার্যকরের পর সচিব পদমর্যাদায় অবসরে যান। তবে চাকুরি জীবনে নুরুল হুদা সচিব হিসেবে কোনো মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেননি।বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে মিঃ হুদার নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ।
“যে ব্যক্তি আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এসেছেন, এই মেসেজটা জাতির কাছে গিয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে। দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে এভাবে। এবং আমরা দেখেছি যে একঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে! এটাওতো প্রশ্নবিদ্ধ। প্রেসিডেন্টের কাছে একটা লিস্ট যাওয়ার পরে একঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত সরকার বলে দিল, তাহলে যাচাই বাছাই কখন করলো? এটা যে পূর্ব নির্ধারিত সেটাওতো প্রমাণ হয়ে গেছে।”
বিরোধীরা অভিযোগ করছে নতুন সিইসি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘জনতার মঞ্চ’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ প্রেক্ষাপটে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা এবং দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।এই বিতর্কের তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। যে নামগুলো ছিল সেখানে বিতর্কের উর্দ্ধে তো অনেক লোক ছিল। আজকে এটা (নির্বাচন কমিশন) গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, বিতর্কিত হয়েছে, সন্ধিহান হয়েছে জাতি। আজকে এ জায়গাটাতেই হয়েছে সমস্যা।
অন্যদিকে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি গঠিত কমিশনকে যোগ্য মনে করছে এবং অনেকে বিএনপির তোলা নানা প্রশ্ন ও বিতর্কের পাল্টা জবাব দিচ্ছে।আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ বলছেন নতুন কমিশনই আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবে।
বর্তমান কমিশন নিয়ে শুরুতেই বিএনপির বিতর্ক সৃষ্টির বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। অহেতুক একটা ভাল লোককে, একজন সম্মানিত মানুষকে অপমানিত করাটা হলো বিএনপির মজ্জাগত অভ্যাস। বর্তমান কমিশনই আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং এ সরকার অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরে বিকল্প কোনো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তোফায়েল আহমেদ বর্তমান কমিশন নিয়ে শুরুতেই বিএনপির বিতর্ক সৃষ্টির বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন।
জনতার মঞ্চ তো হয়েছিল ১৫ই ফেব্রুয়ারি (১৯৯৬) নির্বাচনকে স্থগিত করাবার জন্য। ঐ নির্বাচন তো হয়েছে। জনতার মঞ্চেই যদি তিনি থাকতেন তাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হলো না কেন? কারণ মিস্টার হুদার আমলেই তো সেই পনের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে শুরুতেই এমন বিতর্ক আর পাল্টাপাল্টি অবস্থান সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছে।
নতুন কমিশন নিয়োগ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিরক্তি এবং সন্দেহ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ।গুলিস্তানের একজন পথচারী বলছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এ কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে হবে তা মনে হচ্ছে না। কেন মনে হচ্ছে না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “সবকিছু আগে থেকেই সাজানো মনে হচ্ছে।
ফুটপাতের একজন ব্যবসায়ী বলছেন, এইখানে যদি ফেরেশতারেও বসায় তাইলে আরেকপক্ষ কইবো এইডা হয়নাইকা। আমাগো দলগুলার মধ্যেই সমস্যা। হেরা কোনো কিছুতেই একমত না।
নতুন কমিশন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের কারণ দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এ কমিশনের।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলছেন নতুন কমিশনের প্রতিটি কাজ তাদের নজরে থাকবে।এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলেন, একদিক থেকে এ কমিশনের কাজ কিছুটা সহজ, কারণ বিগত নির্বাচন কমিশন একটা সমালোচনার জায়গা ফেলে গেছে। একটা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে তারা বিদায় নিয়েছে। অন্যদিক দিয়ে ওনাদের কাজটা কঠিন। কারণ এখন সমাজ নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনামুখী। তাই তাদের প্রতিটি কাজ তাদের নজরে থাকবে, তাদের প্রতিটি বক্তব্য মানুষ কান পেতে শুনবে। তাদের প্রতিটি আচরণ মানুষ বিশ্লেষণ করবে।
অতীতে দেখা গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির দ্বন্দ্ব সংঘাতের পেছনে কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন বিতর্ক।শুরুতেই যখন বিএনপি অভিযোগ করছে যে এ কমিশন সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দিতে পারবে না। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন বিতর্ক যে আরো অনেক দূর গড়াবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।