হিট সিনেমা’র বাস্তব গ্যাংস্টার
এস রহমান : হিট-সিনেমা দেখে গ্যাংস্টার বনে গিয়েছিল সে। একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়ে ধরা পড়ে সে। একপর্যায়ে জেল থেকে পালায় হেলিকপ্টারে করে। কিন্তু বেশি দিন বাঁচতে পারেনি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে। মাত্র ৩ মাসের মাথায় ‘দশ দিনের চোরের এক দিন গৃহস্তের’ কবলে পড়ে ফের ধরা পড়ে সে-!পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, হিট সিনেমা দেখেই সে গ্যাংস্টার বনেছে।
প্যারিসের ‘রু’ কারাগার থেকে তিন মাস আগে সিনেমার কায়দায় জেল ভেঙে হেলিকপ্টারে চড়ে উড়াল দেওয়া আলোচিত সেই গ্যাংস্টার রেদোয়ান ফাইদকে ফের গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ফ্রান্সের পুলিশ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিসের উত্তরে ক্রেইল এলাকা থেকে মঙ্গলবার আলজেরীয় বংশোদ্ভূত রেদোয়ান ফাইদ ও তার ভাইসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
কারা কর্তৃপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুলিশকে ঘোল খাইয়ে দুই দফা জেল পালানো এই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী নিজেই একসময় বলেছিলেন, তিনি গ্যাংস্টার সিনেমার ভক্ত। পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার কায়দা সিনেমা দেখেই শিখেছেন।
প্যারিস চলচ্চিত্র উৎসবে হলিউডের ‘হিট’ সিনেমার পরিচালক মাইকেল মানের সঙ্গে দেখা করে তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন এই গ্যাংস্টার। বলেছিলেন, “আপনিই আমার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার’। টাকার গাড়ি লুটের চেষ্টার দায়ে ২৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত রেদোয়ান ফাইদকে গত জুলাই মাসে জেল ভেঙে নিয়ে যায় তার সহযোগীরা।
তিন সহযোগী ভারী অস্ত্র নিয়ে হেলিকপ্টার থেকে প্রথমে ‘রু’ কারাগারের ভেতরে নামে। কোনো রক্তপাত ছাড়াই ফাইদকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে তারা পালিয়ে যায়। পুরো ঘটনায় সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। পরে ওই কারাগার থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে পোড়া অবস্থায় হেলিকপ্টারটি খুঁজে পায় পুলিশ। সেখান থেকে গাড়িতে করে পালিয়ে যান ফাইদ আর তার সহযোগীরা।
ইউরোপ-ওয়ানের খবরে বলা হয়, ফাইদকে জেল ভেঙে বের করে আনতে যে হেলিকপ্টারটি ব্যবহার করা হয়েছিল, এক প্রশিক্ষককে আটকে রেখে সেটি ছিনতাই করা হয়েছিল। অপারেশন শেষে ওই প্রশিক্ষককে মুক্তি দেয় তারা।৪৬ বছর বয়সী রেদোয়ান ফাইদের জেল পালানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়।
২০১৩ সালে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে স্থানান্তরের পর আধা ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে চার গার্ডকে জিম্মি করেন তিনি। এরপর পাঁচটি দরজা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে এলে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় থাকা এক সহযোগী তাকে নিয়ে চম্পট দেয়। জেল পালানোর ওই ঘটনায় ফাইদের নাম চলে আসে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে। দেড় মাসের মাথায় এক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রেদোয়ান ফাইদ ২০০৯ সালে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি প্যারিসের শহরতালিতে নিজের বেড়ে ওঠা এবং অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওই বইয়ের কারণে এই গ্যাংস্টারের খ্যাতি অথবা কুখ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ে। ফরাসি পুলিশের কাছে তার নাম হয়ে যায় ‘লেখক’।
ফাইদ তার বইয়ে ‘অপরাধ ছেড়ে ভালো হয়ে গেছেন’ বলে দাবি করলেও পরের বছর এক ডাকাতির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এক পুলিশ সদস্য ওই ঘটনায় নিহত হন।ডাকাতি চেষ্টার ওই ঘটনায় আদালত রেদোয়ান ফাইদকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। আর পরে জেল পালানোর দায়ে তাকে দেওয়া হয় দশ বছরের কারাদণ্ড।
‘রু’ কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, রেদোয়ান ফাইদ কখনোই কারারক্ষীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতেন না। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের তাতে স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না।মনে হয়, জেল পালানোর ইচ্ছেটা তার মনের কোনায় সব সময়ই থাকত। আচরণে সে খুবই নম্র আর ভদ্র; এর আড়ালে সে তার পরিকল্পনা লুকিয়ে রাখতো।