হিজরাপুরুষ থেকে নারী হয়ে বন্ধুর সঙ্গেই বিয়ে
কলকাতা থেকে অমীত রায়: পুরুষ থেকে নারী’তে রুপান্তরিত হয়ে বন্ধুর সঙ্গেই বিয়ে হলো শ্রী’র। বছরটা ২০০০ সাল, নবম শ্রেণীতে একই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই শ্রী ও সঞ্জয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। সেখান থেকে একে অপরকে ভাললাগা পরে ভালবাসা, শেষ পর্যন্ত তারা ঠিক করে একে অপরকে বিয়ে করবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভাল চোখে দেখেনি সমাজ।
কারণ শ্রী ছিল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। স্বাভাবিক কারণেই অন্যদের মতো সঞ্জয়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারতো না, কারণ বাইরে বের হলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকতো কতগুলো উৎসুক চোখ, পাশ থেকে উড়ে আসতো নানা টিপ্পনি। অবশেষে তাদের সেই ভালবাসার জয় হল শনিবার, আইনগতভাবে দুই বন্ধু বিয়ে করলেন একে অপরকে। সেই সঙ্গে ভারতে প্রথম বৈধ রূপান্তরকামী বিয়ে দেখল পশ্চিমবঙ্গ।
কলকাতা সংলগ্ন কেষ্টপুরের এক পাড়ারই বাসিন্দা এবং সহপাঠি ছিলেন শ্রী ঘটক ও সঞ্জয় মুহুরী। সেই সুবাদেই দুই জনের মধ্যে সর্ম্পক গভীর হতে থাকে। শ্রী তৃতীয় লিঙ্গ জেনেও তাকে বিয়ে করবে বলে মনস্থির করেন একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সঞ্জয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল আইনি জটিলতা। আর সামাজিক সমস্যাতো ছিলই।
এরপরই দুই বছর আগে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয় নাট্যকর্মী ও একটি এনজিও কর্মী শ্রী(৩০)। সফল অস্ত্রোপচারের পর ধীরে ধীরে পুরোপুরিভাবে নারী হয়ে ওঠেন শ্রী। শনিবার সন্ধ্যায় বাগুইআটির একটি অভিজাত হোটেলে সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী শ্রী ও সঞ্জয়-এর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
তবে এই পথটা অত সহজ ছিল না বলে জানান শ্রী। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের সাহায্যে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। সঞ্জয় এবং আমি দুইজনেরই আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। দুই বছর আগে আমি অস্ত্রোপচার করে লিঙ্গ পরিবর্তন করাই এবং এরপর মনে কিছুটা আশা জাগে’।
শ্রী আরও জানান, ‘আমার ভাল ও খারাপ সময়ে সঞ্জয় সব সময় পাশে থেকেছে। আমি তার কাছ থেকে একটু ভালবাসা চাই। ওঁ আমার প্রতি খুবই যত্নবান এবং আমি মনে করি ও সবচেয়ে ভাল স্বামী হবে’।
তিনি আরও জানান, সঞ্জয়ের পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে আপন করে নিয়েছেন। আমার শাশুড়ি আমায় বলেছেন আজ থেকে তুমি আমার বউ-এই কথাটা কোনদিনই ভুলবো না’। খুব শিগগির হানিমুন করতে গোয়ায় যাবেন বলেও জানান নতুন দম্পতি।
অন্যদিকে শ্রী’কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয়ও। তিনি জানান, ‘একজন পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে যেমন হিসাবে দেখতে চায়- শ্রীও তেমনই সুন্দর, একটু হেঁয়ালি, সবকিছু মিলিয়ে দারুন। ওঁ আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। তাই এবার আমার তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাছাড়া ও লিঙ্গ পরিবর্তন করার পর শ্রী এখন পুরোপুরিভাবে নারী হয়ে গেছে’।
সঞ্জয় আরও জানান, ‘আমরা দুইজনই অবাক হয়ে গেলাম যখন আমরা দেখলাম যে যারা এর বিরোধিতা করবে ভেবেছিলাম তারাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাদের সমর্থনে লড়াই করছে। এই ধরনের বন্ধু, পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে আমরা শুধুমাত্র আমাদের বিবাহিত জীবনটা খুব সুন্দর অতিবাহিত করতে চাই’।