হাসিনা হত্যা চেষ্টাকারী ২৮ জন কারাগারে
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : দুই যুগেরও বেশি সময় আগে পাবনায় ট্রেনে হামলা করে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ২৮ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এদের সবাই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বাকি ২৪ আসামির বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। রবিবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুস্তম আলী এই নির্দেশ দেন। এই মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। তাদের মধ্যে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অর্ধেকের কিছু বেশি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৮ নেতা-কর্মী সকালে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তাদের আইনজীবীদের দাবি, এই মামলাটি হয়রানিমূলক। আসামিরা কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে বলে, এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনাকে সেদিন হত্যা করা গেলে আজ দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি থমকে যেত। মামলাটি নিষ্পত্তিতে এত দীর্ঘ সময় লাগায়ও তারা উষ্মা প্রকাশ করেন।সোমবার সকাল ১০টায় এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে। যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায় ঘোষণা করা হবে।
মামলার নথি অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংগঠনিক সফরে খুলনা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ট্রেনযোগে রওয়ানা হন। পথে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে ছিল পথসভা। ট্রেনটি পাকশী স্টেশনে পৌঁছার পরপরই তাতে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা চালানো হয়। পরে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ওইদিনই তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাত জনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মামলাটি পুনঃতদন্ত করে পুলিশ। তখন ঈশ্বরদী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল এদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার ২১ বছর পার হয়ে গেলেও এই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারে তার তিনটি মেয়াদ শেষ করে চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মাঝে বিএনপি-জামায়াত জোট একবার এবং প্রায় দুই বছর ছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর দেশে ফেরা তার বড় কন্যা শেখ হাসিনাকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যাচেষ্টার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত রায় হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো কোনোটির তদন্তের অগ্রগতিই জানাতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আক্তারুজ্জামান মুক্তা বলেন, মামলাটি দীর্ঘ ২৫ বৎসর ধরে চলছে। মাননীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে নিয়েছেন। আগামীকাল যুক্তিতর্কের দিন রয়েছে। আমরা চাই এটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান মুক্তা। আসামিপক্ষে ছিলেন নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন।