হাসিনার ‘মৃত্যুকামনাকারী’ মনির হঠাৎ শত কোটিপতি
এস রহমান : শেখ হাসিনার ‘মৃত্যুকামনাকারী’ মনির এখন আঙ্গুল ফুলে বটগাছ বনে গেছেন। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রকল্পে প্রায় শত কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন সেই মনির। ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ওই কাজ পান।
প্রতিষ্ঠানটির স্বঘোষিত চেয়ারম্যান ও সিইও তিনি। অভিযোগ আছে, মনির কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির বৈধ চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে নিজেই প্রতিষ্ঠানের মালিক ঘোষণা দেন। প্রতিষ্ঠানটি হেফাজতের তাণ্ডবের সময় প্রপাগান্ডায় ভূমিকা রেখেছিল বলে অভিযোগ আছে।
ক্রিয়েটিভের বর্তমান চেয়ারম্যানকে কৌশলে সরিয়ে দিয়েছে মনির। সূত্রমতে, জামায়াতের আর্থিক সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সিংহভাগই করে দিয়েছে ক্রিয়েটিভ। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান জানান, মনির সরকারের অনেক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে সুম্পর্ক গড়েছেন। এ অবস্থায় তিনি বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে মনিরের মোবাইলে ফেসবুকে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।
সূত্র জানায়, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে চলছে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ। সারা দেশ উত্কণ্ঠায়। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মাঠে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তত্পর। সেই সময় হেফাজতের সমর্থনে অনলাইনে গড়ে ওঠে অসংখ্য প্রপাগান্ডা টিম। এ রকমই একটি টিমের নেতৃত্বে ছিলেন মনির হোসেন।
তিনি ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে একটি স্ট্যাটাস দেন, ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে, হাসিনার হইছে সেই দশা।’ ওই সময় এ রকম বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহী অসংখ্য স্ট্যাটাস দেন মনির। মনির মনে করেছিলেন শেখ হাসিনার সরকারের পতন হবে এবং তিনি বিএনপি জোট সরকারের কাছ থেকে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো হাতে পাবেন। কিন্তু বিএনপি জোট ক্ষমতায় না এলেও মনির একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ঠিকই সেসব কাজ পেয়েছেন।
বিশেষ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মেয়ে চাকরি করেন মনিরের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্রিয়েটিভ আইটিতে। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রণালয়ের কোটি টাকার কাজ পেয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটি ‘ম্যানেজ’ করে কাজ নিচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ব্যাংকের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্টের (সিপ) ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পে প্রশিক্ষণের জন্য ক্রিয়েটিভকে নির্বাচন করা হয়। এরপরই বিষয়টি নজরে আসে সবার।
সূত্র জানায়, ২০১৩ পর্যন্ত ধানমন্ডির অর্কিড প্লাজায় ছোট একটি অফিস ছিল ক্রিয়েটিভের। ওই সময় অফিসের স্টাফদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারত না তারা। প্রতিষ্ঠানের অনেক অংশীদার পাওনা না পেয়েই চলে যেতে বাধ্য হন। সেই প্রতিষ্ঠান এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। অর্কিড প্লাজার ঘুপচি অফিসের বদলে ২০১৪ সালের শুরুতে ধানমন্ডির মমতাজ প্লাজায় বিশাল পরিসরের দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন তারা।
প্রতি মাসের অফিস ভাড়া এখন সাড়ে ৪ লাখ টাকার ওপর। স্টাফ মিলে মাসিক খরচ ১৫ লাখ টাকার ওপর। এত টাকা তারা অর্জন করেছে মাত্র এক বছরে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলেছে ক্রিয়েটিভ। ইতিমধ্যে ‘সিইও’ মনির তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ৫০ বিঘা জমিসহ একটি বাগানবাড়ি কিনেছেন।
এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চেয়ারম্যানকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের আর্থিক সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সিংহভাগই করে দিয়েছে ক্রিয়েটিভ। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান জানান, মনির সরকারের অনেক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে সুম্পর্ক গড়েছেন। এ অবস্থায় তিনি বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
হেফাজতের তাণ্ডবে সমর্থন : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় মনির রাষ্ট্রদ্রোহী ও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। সেসব প্রমাণ ডিলিট করে দিলেও বিভিন্ন জন সেগুলোর স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছেন।
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের গণজোয়ারের সময় মনির প্রপাগান্ডায় নেতৃত্ব দেন। ক্রিয়েটিভ আইটির অর্কিড প্লাজার অফিসে সারা রাত জেগে সঙ্গীদের নিয়ে মতিঝিলে ‘গণহত্যা চলছে’ মর্মে নানা প্রচারণা চালান। ওই সময় মনির ফেসবুকে লেখেন, ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে, হাসিনার হইছে সেই দশা’। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি পুলিশ ও ছাত্রলীগকে নিয়ে লেখেন, ‘লীগের এই বীর সন্তানেরা থাকতে আমাদের দেশে পুলিশের কি কোনো প্রয়োজন আছে?’ দেশে থ্রিজি চালুর সময় সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুনের একটা মন্তব্যের জন্য ২২ অক্টোবর ২০১৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে মনির লেখেন, ‘সকল স্বপ্নের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব…’!!!