• বুধবার , ১৬ অক্টোবর ২০২৪

হাসিনার পিয়নের টাকার পাহাড়-অনুসন্ধানে নামল সিআইডি


প্রকাশিত: ৩:১৭ এএম, ২ অক্টোবর ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

 

লাবণ্য চৌধুরী : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই আলোচিত পিয়ন ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। মঙ্গলবার সিআইডির একটি উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে এতথ্য জানায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন পরিচয় দেওয়া জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধ সম্পদ ও অর্থপাচারের তথ্য পাওয়ার কথা তুলে ধরে সিআইডি বলছে, মানিলন্ডারিং আইনে এ অনুসন্ধান চালানো হবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ জুলাই এই জাহাঙ্গীরকে নিজের পিয়ন ইঙ্গিত করে ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য জানার পর তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার কথাও সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলে পরদিনই জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্টাফ পরিচয় দেওয়া জাহাঙ্গীর গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন।সরকার পতনের পর এবার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অনুসন্ধানে নামার সিদ্ধান্ত জানাল সিআইডি।

আলোচিত জাহাঙ্গীর এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক এবং হুণ্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে বলেও জানতে পেরেছে সিআইডি। যেটির প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনের ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের কাজ ছিল সুধা সদনে খাবার পানি সরবরাহ করা। এ কারণে তার নাম ছিল ‘পানি জাহাঙ্গীর’। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে সে পিয়ন হলেও নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন তিনি।

এর ফলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পিয়ন জাহাঙ্গীরকে। সে ব্যক্তিগত সহকারী বা পারসোনাল এসিট্যান্ট পরিচয়ে আওয়ামী লীগের পদ, চাকরি নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে জাহাঙ্গীর আঙ্গুল ফুলে বটগাছ বনে যান। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গড়েছেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিকসহ গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসায় মূলধন ৭৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়।জাহাঙ্গীরের নিজের নামে এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, মিরপুরে ৭ তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে পৈতৃক ভিটায় চারতলা বাড়ি রয়েছে।সিআইডি বলছে, “এর বাইরে তার পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে, নোয়াখালী শহর মাইজদীর হরিনারায়নপুর এলাকায় যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়ায় দেওয়া আছে।”

এছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ডিপিএস ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে মূলধন ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা থাকার তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট।

এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন তুলে ধরে তখন বলা হয় “প্রধানমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের কোনো সম্পর্ক নেই।”
নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের প্রয়াত রহমত উল্লাহর ছেলে জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতেও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সকলকে সে সময় অনুরোধ করা হয়।গত ১৪ জুলাই গণভবনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা, জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।”