• শুক্রবার , ১ নভেম্বর ২০২৪

হাসিনার জায়গা নাই-ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে : ইউনূস


প্রকাশিত: ১২:০৩ এএম, ৩১ অক্টোবর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬ বার

কূটনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) ও আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তারা রাজনৈতিক কূটকৌশল করেছে, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। একই সময় তিনি রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক দল গঠন করার কোনো ইচ্ছা তার নেই বলেও জানিয়েছেন। তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা ও সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবো।

মুহাম্মদ ইউনূসের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের কোনো স্থান নেই।ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এই নোবেলজয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখনই শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছ থেকে ফেরত চাইবে না, যাতে বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে পারে। গরিবের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) ও আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না।আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তারা রাজনৈতিক কূটকৌশল করেছে, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সবসময় অভিযোগ করেছে যে, শেখ হাসিনা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা কিংবা সংস্কার করা অথবা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত বলে বিতর্ক চলছে।

ড. ইউনূস বলেন, তার অনুমান, আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, কারণ এটি রাজনৈতিক সরকার নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ ও ভবিষ্যতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইবে সরকার।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের রায়ের পর আমরা ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। আমি মনে করি না যে, রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।এর আগে গত আগস্টে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, তার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি যেকোনো অভিযোগের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। কারণ তিনি অন্যায় কিছু করেননি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দিল্লির অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে।বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় আট শ জন নিহত হয়েছেন। তবে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ ঘটেছে ও ‘খুব অল্প সংখ্যক’ প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাদের ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সহিংসতার শিকার অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হচ্ছে।

ড. ইউনূস বলেন, ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ, পানি ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু দিল্লির সমর্থনের অভাব তার সরকারকে আঘাত করেছে। মোদী যদি বাংলাদেশ সফরে আসতে চান, তাকে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে।ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত।