হাসিনার উন্নয়নের মাইলফলক-পরমানু বিদ্যুত
শফিক রহমান : এবার পরমানু বিদ্যুত পাবে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মাইলফলকে’র নয়া সংযোজন পরমানু বিদ্যুত। জানা গেছে, ১৯৬২ সালে আইয়ুব সরকারের আমলে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও কোন সরকার এ প্রকল্পে আলোর মুখ দেখায়নি। রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেননি।
ফলে শেখ হাসিনার জন্যে এই প্রকল্প ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। যা আজ তিনি মোকাবেলা করে দেখিয়ে দিলেন-তিনিই দেশপ্রেমিক একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক। ফলে আজ বৃহস্পতিবার তিনি নিজ হাতে ঢালাই দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মূল কাজের ‘রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং’ উদ্বোধন করলেন। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পারমাণবিক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী আকাশপথে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় গিয়ে পৌঁছেন।
এ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তের আরেক মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। কংক্রিট ঢালাই শুরুর পর আগামী ৬৮ মাসের মধ্যেই এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।১ হাজার ৬২ একর জায়গার ওপর রাশান ফেডারেশনের সহযোগিতায় প্রকল্পের অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরবেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রতিনিধি রোসাটমের মহাপরিচালক মি. আলেক্সি লিখাচেভ, ভূমিমন্ত্রী মো. শামসুর রহমান শরীফ। সব শেষে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সার্বিক কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনায় রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ। এখন চলছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের কাজ। এরই অংশ হিসেবে আজ উদ্বোধন হল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনার ‘রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং (উৎপাদন কেন্দ্র)’ নির্মাণ কাজের।
এরই মধ্যে গুটিয়ে আনা হয়েছে স্থাপনাটির ফাউন্ডেশনের (ফাস্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি) সার্বিক কার্যক্রম। দুই পর্যায় মিলে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮০ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে।প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টর বসবে। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি, যা কেবল রাশিয়ায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রয়েছে। আর বাংলাদেশের রূপপুরই হবে এর দ্বিতীয় ব্যবহার।২০২০ সালের মধ্যেই রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে চলে আসবে। তার পর প্রকল্প এলাকায় তা সংযোজন করা হবে।
১৯৬২ সালে আইয়ুব সরকারের আমলে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্ধশতাব্দীকাল ধরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এতকাল ধরে এটি ছিল শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি।শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সরকারের আমলে রূপপুর ইস্যু হালে পানি পায়। চুক্তি হয় রাশিয়ার সঙ্গে।রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন (রসাটমের) নেতৃত্বে ২০১৩ সালে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে ২৬০ একর জমি পর্যাপ্ত না হওয়ায় রূপপুর চরের আরও ৯৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা পদ্মার বিশাল চরে চলছে মাটি ভরাটের কাজ।এদিকে মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে তৈরি হচ্ছে গ্রিনসিটি আবাসন পল্লী। ইতিমধ্যেই তিনটি সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ১১টি বিল্ডিং এবং ১৬ তলা ৮টি বিল্ডিংয়ের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ২২টি সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরি হবে এ চত্বরে।এ ছাড়া থাকবে মাল্টিপারপাস হল, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।