• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

হার্ট কথা বলে দেবী শেঠির ইশারায়-


প্রকাশিত: ৯:৫৫ পিএম, ৪ মার্চ ১৯ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৪৬ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : পৃথিবীর ১০ জনের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি। রোগীকে প্রাধান্য দিয়ে এই ডাক্তার নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর ফোনকলও অগ্রাহ্য করেছিলেন। তিনি ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃত্‍পিণ্ড অস্ত্রোপচারকারী। তিনি ১৯৯১ সালে নয় দিন বয়সি শিশু রনি’র সফল হৃতপিণ্ড অপারেশন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বিষয় যেনো হার্ট কথা বলে দেবী শেঠির ইশারায়-!

সেই শেঠি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন সরকারের আমন্ত্রণে। তাঁর পরামর্শে চমকে যান বিএসএমএমইউ চিকিৎসকরা। পরে তাঁর পরামর্শে ওবায়দুল কাদেরকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। ঢাকা ত্যাগ করার আগে তিনি সৌজন্য সাক্ষাত করে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

জানা যায়, ডা. দেবী শেঠি একদিন একটি শিশুর জটিল ওপেন হার্ট সার্জারি করছেন এমন সময় তার বিশেষ সহকারী অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে বলেন- ‘স্যার প্রধানমন্ত্রী ফোন করে লাইনে আছেন এবং আপনার সঙ্গে জরুরি একটা আলাপ আছে বলেছেন’। ডা. শেঠি দেখলেন এই শিশুটির অস্ত্রোপচারে দেরি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা, তাই তিনি নিজের সহকারীকে বললেন- ‘পিএম-কে বলো আমি ওটিতে আছি, এক ঘণ্টা পর ফোন করার জন্য’। অবশ্যই এক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী ফের ফোন করেন।

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শেঠির নারায়ণা হৃদয়ালয় হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল। ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি পৃথিবীর ১০ জনের একজন।দেবী শেঠি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার কিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে অষ্টম শেঠি মেডিকেলে পঞ্চম গ্রেডে পড়ার সময় তত্‍কালীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃত্‍পিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হবার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৯১ সালে নয় দিন বয়সি শিশু রনি’র হৃত্‍পিণ্ড অপারেশন করেন যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃত্‍পিণ্ড অস্ত্রোপচার। তিনি কলকাতায় মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিত্‍সক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর কিছুকাল পর তিনি ব্যাঙ্গালোরে চলে যান এবং মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫,০০০ এর বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি করেছেন।

রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিত্‍সা সেবা দেবার সাথে সাথে তার অর্থনৈতিক অবস্থা অর্থাত্‍ ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চান এবং সে মতে পদক্ষেপ নেন।জানা যায়, দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া দেবী শেঠী ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারী বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেন।

১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরীর লোভ ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এখানে ডাঃ রায়ের সাথে তিনি কলকাতার গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিত্‍সা হাসপাতাল বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার। কিন্তু ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুন বেশী হওয়ায় এই একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এজন্য ডাঃ দেবী শেঠী ও ডাঃ রায় মিলে আরো তিনটি হৃদরোগ চিকিত্‍সা কেন্দ্র গড়ে তোলেন, বি এম বিড়লা হার্ট সেন্টার যাত্রা শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ হার্ট হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয।

ডাঃ দেবী শেঠী নামক ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন।১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডাঃ দেবী শেঠি যে ৪০০০ শিশুর হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এবং এদের সবাইকেই তিনি বিনামূল্যে চিকিত্‍সা করেছেন।বিশ্বের বৃহত্তম হৃদরোগ হাসপাতাল ‘নারায়না ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়িন্সেস’ ব্যাঙ্গালুরুতে বর্তমানে আছে ১০০০ শয্যা, ১০৭ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ৫টি ক্যাথ ল্যাব, ১৫টি অপারেশন থিয়েটার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫জন ছোট -বড় রোগীর অপেন হার্ট সার্জারী হয়।

বাংলাদেশী চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা-

ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসা প্রদানকারী বাংলাদেশী চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।শেঠি বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অসাধারণ চিকিৎসা প্রদান করেছে। এর চেয়ে ভাল চিকিৎসা আপনি এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও আশা করতে পারেন না।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক শেষে ডা. শেঠিকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফকালে একথা বলেন।

শেঠি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা সর্ম্পকেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য মন্ত্রীকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, এমন একজন খ্যাতনামা ব্যক্তির চিকিৎসা করতে স্থানীয় চিকিৎসকগণকে অনেক চাপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়।প্রধানমন্ত্রী সেতুমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ডাকে দ্রুত সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আসা ডা. শেঠিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার ব্যাপারে আপনার মতামত শুনতে আমি উদগ্রিব ছিলাম।

এর জবাবে শেঠী বলেন, আপনি যখনই ডাকবেন আমি বাংলাদেশে আসবো। প্রধানমন্ত্রী শেঠির সঙ্গে দেশের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে আলোচনা করেন।প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, চিকিৎসা বিদ্যার শিক্ষার্থীরা যাতে স্নাতকোত্তর ও গবেষণার বিষয় এখানে সম্পন্ন করতে পারে এজন্য দেশে প্রথম এ ধরনের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।তিনি বলেন, বিগত কয়েকবছরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।ড. শেঠি ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পরামর্শে অসুস্থ মন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য এয়ারবাসে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।

সেতুমন্ত্রীকে পরীক্ষার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেঠি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের রক্তচাপ ভালোর দিকে এবং তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সেতুমন্ত্রীকে গতকাল এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ডা. শেঠি বলেন, অবস্থা গতকালের চেয়ে ভাল। তবে শঙ্কামুক্ত নয়। এখানকার চিকিৎসকগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।