হামিদের পলায়নে বেরিকেডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দিনাজপুর প্রতিনিধি : সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘তাঁদের (আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে সহায়তাকারীদের) কোনো অবস্থায় ছাড় দেওয়া যাবে না। আর যদি শাস্তির আওতায় না আনি, তাহলে আমি সে সময় চলে যাব।’আজ বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিবিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপদেষ্টার পথরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি (সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশত্যাগ) জানতাম না। এখানে আসার সময় জানতে পারছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের সবাইকে শুধু পদত্যাগ নয়, শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির দাবি জানালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে কথা বলেছি। তাঁরা (বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন) কতটুকু এগিয়েছে, গাড়িতে যেতে যেতে হয়তো কিছু জানতে পারব। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দিনাজপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক একরামুল হক বলেন, ‘এতগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীর রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে সরকার। ফ্যাসিবাদ কায়েমকারীরা একে একে নিরাপদে দেশ ছাড়ছে, এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? সংস্কার তাহলে কোথায় হচ্ছে? যে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি চালাল, তারাই তো ফ্যাসিবাদের দোসরদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এত এত নিরাপত্তা অথচ সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি নিরাপদে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সরকার কিছুই জানে না—এটা হতে পারে না। আমরা সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কথার অনুযায়ী তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।’
বর্ডার সম্পূর্ণ সিকিউরড’
এর আগে দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ঢেলপীর এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে ভীতির কোনো কারণ নেই। আমাদের বর্ডার সম্পূর্ণ সিকিউরড। এখানে কোনো ধরনের কোনো সমস্যা নেই। কৃষকেরা ভালোভাবে ধান কাটতে পারবেন, কৃষিকাজ করতে পারবেন।’
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কৃষকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যাঁরা কষ্ট করে আমাদের জন্য ফসল ফলান। আগে দেশে সাড়ে সাত কোটি লোক ছিল। কৃষিজমি বেশি ছিল। এখন প্রায় ১৮ কোটি লোক, ফলে কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। এরপরও উন্নত জাতের ধান ও কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম এবং বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমের ফলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর আমাদের আমদানি করতে হয়নি। এবারও উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমাদের হয়তো আমদানি করতে হবে না।’
নতুনভাবে কৃষিজমি সুরক্ষা আইন করার চিন্তা চলছে উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। ইটভাটা যেন না চলে, সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আপনারা (সাংবাদিকেরা) সত্য সংবাদ প্রকাশ করলে আমরা উপকৃত হই। অনেক সময় যদি মিথ্যা সংবাদ দেওয়া হয়, এতে প্রতিবেশীরা সুবিধা পেয়ে যায় এবং এটা নিয়ে মিথ্যা রটনা রটায়।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস আসাদুজ্জামান, দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, ‘যাঁরা ফসল ফলান, তাঁরা দাম পান না। দাম পায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। যেটা চাঁদাবাজি করবে, ওইটারে লাথি মারেন। যদি কোনো জায়গায় চাঁদাবাজি হয়, আমাদের তথ্য দেবেন, চাঁদাবাজরে আমরা ছাড়ব না।’
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে উঠান বৈঠকের জন্য প্রচুর টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উঠান বৈঠকের টাকা পকেটে ঢোকাবেন না। পকেটে ঢোকালে কিন্তু আপনারা থাকতে পারবেন না। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আপনারা মানুষকে সচেতন করবেন।’