হাতিরঝিলের ক্যান্সার বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ
সুপ্রীমকোর্ট রিপোর্টার : ৯০ দিনের মধ্যে হাতিরঝিলের ক্যান্সার বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ আপিল বিভাগের। বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন,এ রায়ের ফলে ভবনটি ভাঙতে আর আইনি বাধা নেই।
প্রসঙ্গত, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা নিয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মুনিরউদ্দিন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ভবনটি অবৈধভাবে তৈরি উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার রায় ঘোষণা করেন।
কিন্তু ভবনটি রক্ষায় বিজিএমইএ নেতারা বিভিন্ন স্থানে শুরু করেন দেনদরবার। আর এর আগেই ভবনটির দুটি ফ্লোর রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে বিজিএমইএ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনের বেঞ্চ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ১৯ মার্চ ওই রায়ের পূর্ণ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন সৌন্দর্যম-িত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, পুরো ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।
তাছাড়া হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। কাজেই সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ওপর নির্দেশ হল, ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।
রায়ে আরও বলা হয়, ভবনে বিভিন্ন ফ্লোরের ক্রেতাদের সঙ্গে বিজিএমইএর চুক্তিও বে আইনি। ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ বা কোনো অংশ কারও কাছে বিক্রির কোনো অধিকার বিজিএমইএর ছিল না। তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানত বা তাদের জানা উচিত ছিল, এ জমির ওপর বিজিএমইএর কোনো মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।
সুতরাং তারা কোনো ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নয়। আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে শক্তিশালী একটি মহলকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে’ এমন যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও রায়ে বলা হয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, এখানে দেখা যাচ্ছে যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ যাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তারাই মোট ৬ দশমিক ২১ একর জমি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় ছেড়ে দেয় একই বছরে অর্থাৎ ১৯৬০ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ওই জমি একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে এর নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য বে আইনিভাবে প্রদান করে। অথচ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত আদৌ ওই জমির মালিক ছিল না।
২০১১ সালে ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্ট রায় দেয়ার পরপরই বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের ওই রায়ের ওপর প্রথমে ৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন।
এরপর সময়ে সময়ে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। পরে ১৯ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করেন। আইন অনুযায়ী রায় পছন্দ না হলে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ২০১৩ সালের ২১ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেন।