• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

হাতাহাতি ককটেল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ঝামেলা ইভিএমে


প্রকাশিত: ৫:০৮ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫২ বার

 

জাতিরকন্ঠ রিপোর্ট : হাতাহাতি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ঝামেলায় ইভিএম এ ভোট শেষ হয়েছে। এই ভোটে ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলা এবং ভোটকেন্দ্রে এক শ্রেনীর ভোট দালালদের দালালিতে ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে মণক্ষুন্ন হয়েছেন। এই দালালরা সম্মাণিত ভোটারদের উপদেশ দিচ্ছিল। অনেকে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে চালাকি করেন বোতাম টিপতে। তবে সবচেয়ে বেশী সমস্যা দেখা দেয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলা। এর অন্যতম প্রধান উদাহরণ হলেন সিইসি।

আজ সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ভোট দিতে গেলে ইভিএম মেশিনে তার ফিঙ্গার প্রিন্টও মেলেনি। উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে তিনি ভোট দিয়েছেন। তবে দৃষ্টিকটু বিষয় হচ্ছে সর্বত্র নগণ্য ভোটার উপস্থিতি। ভোটারের চেয়ে এবার প্রার্থীদের কর্মী সমর্থক ছিল বেশী। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে সরেজমিনে এসব চিত্র দেখেছেন জাতিরকন্ঠ প্রতিনিধি ও বিশেষ প্রতিনিধি ও স্টাফ রিপোর্টাররা।

কম ভোটার উপস্থিতি, ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলা, ইভিএম ব্যবহারের পদ্ধতি দেখিয়ে দেওয়ার নাম করে ভোটারের ভোট দিয়ে ফেলা, প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, সংঘর্ষ, এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগের মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়েছে। তবে সাময়িক অচলাবস্থা বাদে কোনও কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ বা ভোট বাতিলের ঘটনা ঘটেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার ৪৬৮টি। ভোটকক্ষ ছিল ১৪ হাজার ৪৩৪টি। ঢাকা উত্তর সিটিতে এক হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও সাত হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে এক হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ছয় হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ ছিল।দুই সিটিতে ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৭০০টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৮টি ইভিএম মেশিন ছিল। মোট ভোটার ছিলেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের হাতাহাতি-

এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।সকাল ৯টার দিকে গেণ্ডারিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসি প্রতীকের মিনুর অনুসারীরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘুড়ি প্রতীকের নির্বাচনি বুথ ভেঙে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর মিনুর অনুসারীরা ফরিদাবাদ হাইস্কুলে ঢুকে ঘুড়ি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের কার্ড কেড়ে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। পাশের ফজলুল হক মহিলা কলেজ কেন্দ্রের গেটে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত গেন্ডারিয়া থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন জাতিরকন্ঠ কে বলেন, ‘দুই প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। আমরা ওদের সবাইকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

সকালে আদাবরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ইকরা স্কুলকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কাসেমের সমর্থকরা বিদ্রোহী টিফিন ক্যারিয়ার প্রার্থীর লোকজনদের মারধর করে। মিরপুরের আদর্শ স্কুলকেন্দ্রে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর অনুসারীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী কদম আলী মাতবরের লোকজনের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বকশিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় অন্তত ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বকশিবাজার কেন্দ্রে সকাল থেকেই মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী ওমর বিন আবদাল আজিজ তামিম ও তার সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটের দিকে এই ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শাহেদা মোরশেদের সমর্থকেরা উপস্থিত হন। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অন্তত আটটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনার সময় ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের লাইনে থাকা ভোটাররা স্থান ছেড়ে সরে যান। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের গাড়িতে পাঁচটি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ করেন তাবিথের মিডিয়া সমন্বয়কারী মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, ‘শনিবার বেলা ১২টার দিকে ডিএনসিসি’র ১৬ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপুরে মণিপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা-২ কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তার গাড়িতে এ ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’এছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদে আগামী নিউজের রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। তাকে উদ্ধার করে সিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিএনপির এজেন্টদের বের করে-

ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে না দেওয়া এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় গুলশান-২ এর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভোট দেওয়ার পর দলটির উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি এসব অভিযোগ করেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কালাচাঁদপুর স্কুল কেন্দ্রে যান তাবিথ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ কেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এজেন্টদেরও বের করে দিয়েছে। আমি এসেছি যেন ভোটারদের অন্তত প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারি।’ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে তিনি অভিযোগ জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই কেন্দ্রটি ভোটার শূন্য। গণমাধ্যমের কর্মীদের দেখে লাইনে দাঁড়ান নৌকার কার্ডধারী লোকজন। তবে লাইনে দাঁড়ালেও কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলেও ভোটার ও এজেন্ট প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন তাবিথ। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে এই কেন্দ্রে আসেন তিনি। ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে শের-ই-বাংলা স্কুল ও কলেজ পরিদর্শন করে ভোটার ও এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন তাবিথ।

পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা শুনেছি, কয়েকটি কেন্দ্রে আমাদের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ম্যাজিস্ট্রেটদের অবহিত করেছি। আমি সশরীরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরবো।কোনোকিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না।’

হাতপাখার ৫০০ এজেন্ট মারধর-

ওদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রের ২০০ এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে ইসলামী আন্দোলন। দলটির উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি মিডিয়া সমন্বয়ক কে এম শরীয়াতুল্লাহ বলেন, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনের দিন উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা, ভাষানটেক, দারুস সালাম ও হাতিরঝিল থানার ২৫টির বেশি কেন্দ্র থেকে হাতপাখার দুই শতাধিক পোলিং এজেন্টকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

একইভাবে ২৮টি কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩ শতাধিক হাতপাখার এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রিটার্নিং কার্যালয়ে দেন ইসলামী আন্দোলন মনোনীত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমানের মিডিয়া সমন্বয়ক আহমদ আবদুল কাইয়ূম।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটারদের আঙুরের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। তবে প্রিজাইডিং অফিসাররা বলছেন, এমন ঘটনা স্বাভাবিক। ভোটারের পরিচয় শনাক্ত হলেই তারা ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।দেখা গেছে, কোনও কোনও ভোটার ৫ মিনিট সময় ব্যয় করেও তার ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের। আবার শনাক্ত করা গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তা নিশ্চিত করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।