• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

হলি আর্টিজান সন্দেহভাজন হাসানাতের বাসায় তল্লাশি-জব্দ কম্পিউটার


প্রকাশিত: ৫:৪৫ পিএম, ৫ জুলাই ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২২৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি:     গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় 1প্রকৌশলী হাসানাত রেজা করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। শনিবার ওই রেস্টুরেন্টে জিম্মিদশা থেকে স্ত্রী ও ২ সন্তানসহ উদ্ধার হওয়ার পর হাসানাতকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাসায় রোববার তল্লাশি চালিয়েছে ডিবি পুলিশ।

বাসা থেকে তার ব্যবহৃত কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। কম্পিউটারে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কিছু প্রমাণপত্র আছে কিনা তা দেখছে ডিবি। হাসানাত একসময় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন। তিনি বর্তমানে তার বাবা রেজাউল করিমের প্রতিষ্ঠান বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে পরিচালকের দায়িত্বে আছেন।

এক সূত্র জানায়, হাসানাত রেজা করিম সম্পর্কে ২০১২ সালে হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। তখন তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন। সে কারণে তাকে সন্দেহের তালিকায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হাসানাত করিম যুক্তরাজ্যেরও নাগরিক। তার বাবা-মা ভিসা জালিয়াতি করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। হাসানাত করিমের মা বনানীর প্লেম্যান স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। হামলাকারীদের দু’জন ওই স্কুলে লেখাপড়া করেছে।

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা গুলশান-২-এ হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ২০ জনকে খুন করে জঙ্গিরা। সেখানকার কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজন অতিথিকে জিম্মি করে রাখে। প্রকৌশলী হাসানাত করিম, স্ত্রী ও দুই সন্তানও জিম্মি হন। এক ছবিতে দেখা যায়, ২ জঙ্গিকে পেছনে রেখে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন।

জঙ্গিরা তাকে ছাদে নিয়েও ঘুরিয়েছে। সারারাত জিম্মি থাকার পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের আগে স্ত্রী-সন্তানসহ তাকে ছেড়ে দেয় জঙ্গিরা। এরপরই তাকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজনকে সেখানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হাসানাত ডিবির কাছে দাবি করেছেন, তার মেয়ে সাফা করিমের জন্মদিন পালন উপলক্ষে স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে তিনি ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পরই জঙ্গিদের হামলার মুখে পড়েন। তবে মুসলমান হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

হাসানাতের স্ত্রী শারমিনা করিম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে টেবিলে বসি। কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে গুলির শব্দ শুনি। ওরা গুলি করতে করতে ভেতরে আসে। এরই মধ্যে আমাদের সামনে অস্ত্র হাতে ২ জন এসে জিজ্ঞাসা করে আমরা মুসলিম কিনা। হ্যাঁ বলায় তারা বলে, আপনাদের ভয় নেই। আমরা মুসলিমদের কিছু বলব না। আপনারা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকেন। বাচ্চাদের কান চেপে ধরে থাকতে বলে।

এরপর অন্য টেবিলে বসে থাকা বিদেশীদের ওপর অ্যাটাক করে তারা। আমাদের সামনেই বিদেশীদের মেরে ফেলে। এরপর ৪ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে এসে আমাদের টেবিলে বসায়। ভোরে আমার স্বামী ও আরেকজনকে বন্দুক ধরে ছাদের ওপর নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে ১০/১৫ মিনিট পর নিচে নামে। এরপর আমার স্বামীকে চাবি দিয়ে বলে, দরজার লক খুলে দেন। এরপর আমাদের ৮ জনকে সেখান থেকে বের করে দেয়।

হাসানাত করিমের বাবা রেজাউল করিম বলেন, ফেসবুকে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় আমার ছেলেকে জড়িয়ে যেসব লেখা হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেউ বউ বাচ্চা নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যায় নাকি? আমার ছেলে খুব একটা ধার্মিকও নয়। শুধু জুমার নামাজ পড়ে। হাসানাত জঙ্গিদের সঙ্গে ঘুরেছে এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দুক ধরে কেউ ঘুরালে সে তো যাবেই।

তাদের সামনেই অনেককে মেরে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে আমার ছেলে কী করবে? বাধ্য হয়ে তাদের কথা শুনেছে। বন্দুক ধরে সন্ত্রাসীরা যা করতে বলবে তাই করতে হবে না? না হলে তো তাদেরও মেরে ফেলত। কিন্তু ফেসবুকে উল্টাপাল্টা লেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ডিবি ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বাসায় তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটার জব্দ করে নিয়ে গেছে। রেজাউল করিমের দাবি তার ছেলে এসবের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।

হাসানাতের পড়ালেখা বিষয়ে জানাতে গিয়ে রেজাউল করিম বলেন, তিনি সুইজারল্যান্ড ও নাইজেরিয়ায় চাকরি করতেন। তার ছেলে হাসানাত করিম ১১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে যায় পড়ালেখা করতে। সেখানেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি করেছেন, অনার্স করেছেন। মাস্টার্স করেছেন। এরপর আমেরিকায় এমবিএ করেছেন। পড়ালেখা শেষ করে দেশে আসেন। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন বছরখানেক। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাও করেছেন। এরপর নিজের কোম্পানি বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন হাসানাত।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ বলেন, হাসানাত করিম চার বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টটাইম শিক্ষক ছিলেন। আন-অফিসিয়ালি জানতে পেরেছি সম্ভবত বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ছিলেন। তবে তার ব্যাপারে অফিসিয়াল তেমন তথ্য নেই।