• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

হলি আর্টিজান ট্রাজেডির পর রাতের ঢাকা শূন্য রেস্তোরাঁ-ভয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে মানুষ


প্রকাশিত: ৭:১৮ পিএম, ১০ জুলাই ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৮ বার

2ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে আসমা খন্দকার : হলি আর্টিজান ট্রাজেডির পর রাতের ঢাকার অভিজাত 1রেস্তোরা যেন শূন্য রেস্তোরাঁ- ভয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে যায় মানুষ ।রাত ১০টার আগেই অভিজাত রেস্তোরাগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। প্রথমে ব্লগার হত্যা, এরপর সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ। আর সর্বশেষে হোলি আর্টিসন বেকারির ঘটনায় স্তম্ভিত ঢাকাবাসী।

রাতের ঢাকায় এখন গুলশান-বনানীর মত অভিজাত এলাকার রেস্তোরাঁগুলো ফাঁকা। ভয়ের কারণেই এখন সন্ধ্যার পর সবাই বাড়ি ফিরছে। দেশের অভিজাত মানুষগুলো, যারা বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড চলাকালীন নিজেদের নিরাপদ মনে করেছিল, আজ তাদের সেই সুখানুভূতির ভিত নড়ে গেছে।

আর্টিসন নাকি বাটলার, কোন রেস্তোরাঁয় খাওয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকত গুলশানে রেস্তোরা দুটির পাশে বাসকারী মুহাম্মদ এ আরাফাত। কিন্তু শুক্রবারের সেই তাণ্ডবের পর এখন তিনি ভাবছেন, আসলে কোথায় যাওয়া নিরাপদ হবে।

কয়েক সপ্তাহ আগে নিজের শোয়ার ঘরে বসে বারবার ভাবছিল ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের শিক্ষক আরাফাত, সন্ত্রাসীরা কিভাবে এখানে পৌঁছল? তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি এলাকা। সেই রাতে আমি প্রচণ্ড দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। বারবার ভাবছিলাম, আমার পরিচিত কেউ সেখানে আটকা পড়েনি তো।

তিনি আরো বলেন, এই হামলা আমাদের সকলকে নাড়া দিয়েছে। এটা খুবই কাছে ছিল। আমরা সেখানকার শব্দ রাতে এবং সকাল পর্যন্ত শুনতে পেয়েছি।

২০১৩ সালে শাহবাগে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে চলা সেক্যুলারদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন আরাফাত। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই এটা তার কাছে আরো বেশি কাছে মনে হয়েছিল।
শুক্রবার গুলশানে হওয়া এই হামলার জন্য জামায়াত ইসলামকে দায়ী করে সরকার। সরকারের দাবি, জামাতুল মুজাহিদিন জেএমবি জামায়াত ইসলামের পক্ষ থেকে এই কাজগুলো পরিচালনা করছে।

এদিকে ঢাকার অভিজাত শ্রেণীর জন্য এই হামলাটি ছিল তাদের ঘরে এসে চালানো হামলার মত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হত্যাসহ বাংলাদেশের আরো বেশ কিছু সমস্যা থাকলেও গুলশানের এই ঘটনা সবাইকে স্তম্ভিত করেছে। কারণ এটি শহরের সেখানে ছিল, যেখানে আঘাতটা সবচাইতে বেশি লাগে। আক্রমণকারীরাও ছিল অভিজাত পরিবারের কিছু তরুণ। তারা নামীদামী স্কুলে পড়েছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে ছিল তাদের বিচরণ। নিজেদের প্রতিবেশীদের মধ্যে তারা ছিল সম্ভাবনাময়। কিন্তু সকল সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল মাত্র ২৪ ঘণ্টায়!

সবচাইতে বাজে বিষয় হল- যে দেশের জন্ম ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে সেই দেশে আজ ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ ও ‘মুক্তমনা’ শব্দগুলো হুমকি স্বরূপ।
বাংলাদেশ সংসদের নারী প্রতিনিধি জানান, ‘আক্রমণকারী এবং হামলায় আক্রান্তরা উভয় ছিল এক সামাজিক ব্যবস্থার শিকার। এটি একটি ছোট সমাজ, এখানে সবাই সবাইকে চেনে। তারা হয়ত বন্ধু নয়, কিন্তু সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের কোন না কোন সম্পর্ক ছিল।

গুলশানে বসবাসকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই নারী সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা আতঙ্কে আছি। এতদিন ভেবেছিলাম, আমরা নিরাপদে আছি, নিম্নবিত্তের যারা আছে, তারা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এই আক্রমণ আমাদের সবাইকে ভীত করেছে।

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমার ২৪ বছর বয়সের মেয়েটি ভয় পাচ্ছে। কারণ সে যেই আন্তর্জাতিক সংস্থাটিতে কাজ করছে সেখানে তারা মাত্র ৩ জন বাংলাদেশি, বাকি ১৭ জন বিদেশি।

ঈদের সময় বনানীর ১২ নম্বর রোডে অবস্থিত পিজা ইন-এর ম্যানেজার সুজন জানান, গত চারদিন ধরে কেউ আসছে না। মাত্র একটি টেবিল বুক করা আছে। বিভিন্ন হোটেল স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেখানে রাজধানীর এসব রেস্তোরাঁ আগে মধ্যরাত বা শেষ রাত পর্যন্ত খোলা থাকত, সেখানে এখন ১০টা ৩০ মিনিটেই রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। কারণ কোন ক্রেতা আসছেন না।