হলিউড:দি ইন্টারভিউ-নিয়ে নাটকীয় কাহিনী
মোঃ কামাল.ঢাকা: উত্তর কোরিয়া একটি ছবি বানিয়েছে, যে ছবির গল্পে দেখা যাবে মেরে ফেলা হচ্ছে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে! কিংবা ইরান এমন একটি ছবি বানিয়েছে, যে ছবিতে গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী!
প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলাম লেখক জাস্টিন ময়ার। প্রশ্ন উঠছে শিল্পের স্বাধীনতা নিয়ে। একজন শিল্পী স্বাধীনভাবেই ভাববেন, সৃষ্টি করবেন। কিন্তু অদৃশ্য হলেও তো সেই শিল্পীর সেই স্বাধীনতার সীমারেখাটি থাকবে। নাকি বাক্স্বাধীনতার নামে একজন শিল্পী যা খুশি তা-ই করতে পারেন? এমনকি সেটা বিশ্বের অনেক মানুষের কাছে জনপ্রিয় বলে বিবেচিত একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার মতো একটি ঘটনাও!
না, সত্যি সত্যি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে কেউ হত্যা করেনি। তবে এমনই একটা গল্প ফেঁদেছেন সেথ রোজেন আর এভার গোল্ডবার্গ জুটি। তাঁদের লেখা ও পরিচালিত দি ইন্টারভিউ অবশেষে মুক্তি পেয়েছে। এ ছবি নিয়ে কী সব কাণ্ডটাই না ঘটে গেল। অনেক আগে থেকেই ছবিটি নিয়ে আপত্তির কথা বলে আসছিল উত্তর কোরিয়া। তাদের আপত্তি আর হুমকি-ধমকির মুখে অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ছবিটি মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক করা হয় ২৫ ডিসেম্বর।
আর মুক্তির আগ মুহূর্তে পরিবেশক কলম্বিয়া পিকচার্সের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্স এন্টারটেইনমেন্টের সার্ভারে সাইবার হামলা চালায় ‘গার্ডিয়ান অব পিস’ নামের একটি হ্যাকার দল। সনির সিন্দুকের গোপন আর স্পর্শকাতর সব তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হয়। যার প্রভাবে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর পর্যন্ত তর তর করে নেমে গিয়েছিল। এফবিআই দাবি করে, এই হ্যাকাররা উত্তর কোরিয়ার মদদপুষ্ট। যেসব থিয়েটারে ছবিটি দেখানো হবে, সেখানে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর হুমকিও আসে।
পাল্টা জবাব দেয় মার্কিন হ্যাকাররা। উত্তর কোরিয়ার ইন্টারনেট ব্যবস্থাই অচল করে ফেলে। দুবার দেশটি ব্ল্যাক আউটের শিকার হয়। ছবিটি ছড়িয়ে দিতে জোট বেঁধেছে দুই তথ্যপ্রযুক্তি দৈত্য মাইক্রোসফট আর গুগলও। চাপের মুখে কিছুটা কাটছাঁট করে ছবিটা মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এত সব ‘সিরিয়াস’ কাণ্ড-কারখানা ঘটে যাচ্ছে, অথচ ছবিটি আদতে একটি পলিটিক্যাল কমেডি ধাঁচের ছবি। যে ছবির গল্পে দেখা যায় ডেভ স্টাইলার্ক (জেমস ফ্রাঙ্কো) নামের এক উপস্থাপক ‘স্কাইলার্ক টুনাইট’ নামের একটি টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। যে অনুষ্ঠানে তারকাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটির সহস্রতম পর্ব প্রচার উদ্যাপন করার পর উপস্থাপক স্কাইলার্ক এবং প্রযোজক অ্যারন পোপোর্ট (রোজেন) জানতে পারেন, উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উন তাঁদের এই অনুষ্ঠানের ভীষণ ভক্ত। তখনই তাঁদের ভাবনায় আসে, উত্তর কোরিয়ার ‘সুপ্রিম লিডার’কে নিয়ে একটি পর্ব করলে কেমন হয়?
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই সাক্ষাৎকারের জোগাড়-যন্ত্র করে ফেলেন ডেভ আর অ্যারন। তখনই সিআইএ এজেন্ট ল্যাসি দুজনকে নিমরাজি করিয়ে ফেলেন সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কিমকে হত্যা করার মিশনে। গুপ্তহত্যায় সবচেয়ে অদক্ষ দুই মানুষের হাতে দেওয়া হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন গুপ্তহত্যার দায়িত্ব! উদেশ্য, উত্তর কোরিয়ায় ‘মহান’ গণতন্ত্র নিয়ে আসা। এ নিয়েই ঘটে যায় যত ঘটনা।
ঘটনা শুধু রুপালি পর্দায় নয়, ঘটছে তাঁর বাইরেও। সমস্যাটা বেঁধেছে কিম জং-উনকে হত্যার কাহিনি এবং দৃশ্যটি নিয়ে। কারণ, চরিত্রটি কল্পিত নয় এবং তিনি দিব্যি বেঁচেও আছেন। যে হলিউড ওসামা বিন লাদেনের মতো তালেবান নেতার জীবদ্দশায় তাঁকে মেরে ফেলার কল্পিত কাহিনি নিয়ে ছবি বানায়নি, জিরো ডার্ক থার্টি বানানো হয়েছে অনেক পরে; সেই হলিউড কেন এখন এ রকম একটি ছবি বানাচ্ছে?
রাজনৈতিক বিদ্রুপাত্মক ছবি হলিউডে কম হয়নি। দ্য নেকেড গান তো আয়াতুল্লাহ খোমিনি, মিখাইল গর্বাচেভ, ইয়াসির আরাফাত, গাদ্দাফি, কাস্ত্রো, ইদি আমিনদের নিয়ে মশকরা করেছে। দ্য গ্রেট ডিক্টেটর নামের ১৯৪০ সালের ছবিতে হিটলারকে নিয়ে কম ঠাট্টা করা হয়নি! সেসব নিয়েও কমবেশি বিতর্ক আছে। কিন্তু সরাসরি খুন করে ফেলার ঘটনা কখনো দেখানো হয়নি। কিংবা হালের শাশা ব্যারন কোহেনের সবচেয়ে আলোচিত দ্য ডিক্টেটর ছবিটা শুরুই হয়েছে তখনকার সদ্য প্রয়াত উত্তর কোরীয় নেতা, কিম জং-উনের বাবা কিম জং ইলের স্মৃতির উদ্দেশে লেখা দিয়ে। সেই ছবিতে স্বৈরশাসকদের চরমভাবে বিদ্রুপ করা হয়েছে। কিন্তু এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে, গণতন্ত্রের নামে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া মার্কিন বটিকাও কার্যকর নয়।
ওয়াশিংটনপোস্ট অবলম্বনে-