‘হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করুন’
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে আগামী নির্বাচনকে ওই নির্বাচনের মতো বিতর্কিত না করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এজন্য নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া উচিৎ মন্তব্য করে তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থীর হলফনামায় দেয়া তথ্য কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। বৈঠকে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বিতর্কিত নির্বাচন, এটা সকলেই স্বীকার করেন, জানেন। তারপর আরেকটি নির্বাচন যেনো অধিকতর বিতর্কিত না হয় সেজন্য এই নির্বাচন কমিশনকে আরও দক্ষতা- নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নবগঠিত কমিশনের চলমান সংলাপের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘নির্বাচন কমিশনের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো নির্বাচনকালে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি। এই আইন-শৃংখলার দায়িত্বে আছে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের হাতে।
ডিসি, এসপিদের সঙ্গে আলোচনায় বসাটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ ছিলো। এর বদলে দুই বেলা হাল্কা চা-নাস্তার সঙ্গে যে আলোচনা হচ্ছে এগুলো কোনো অর্থ বহন করে না।বৈঠকে ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রার্থীর হলফনামার গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা।
সুজন এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ ২০০৫ সালে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আদালত নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরণের তথ্য হলফনামা আকারে সংগ্রহ এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় জনগণকে জানানোর নির্দেশ দেন। অথচ কমিশন এসব তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে হলফনামার বিধানটি আরও কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশনের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। দেশে বেশ কিছুদিন ধরেই অরাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশেষত ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলে উড়ে এসে জুড়ে বসছে। কমিশন হলফনামার তথ্য খতিয়ে দেখলে অনেক বসন্তের কোকিল এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তিকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখা যাবে।’
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন বৈঠকে যোগ দেয়া সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রধান বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশনের ৭৫ শতাংশ খরচ হয়। গত নির্বাচনে যেখানে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছিলো, সেই নির্বাচনে নিরাপত্তা খরচ ছিলো প্রায় ৩’শ ৩৩ কোটি টাকা। অথচ এতো ব্যয়ের পরও নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসনের কাছে নির্বাচনী সহিংসতার কোনো তথ্যই নেই!
ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ছাড়াও ভোটার তালিকার সঠিকতা, সীমানা পুর্নির্ধারণ, এবং নির্বাচনী ব্যয় হ্রাসের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এই গোল টেবিল বৈঠকের লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে সুজন। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা লুতফুর রহমান প্রমুখ।