হঠাৎ সরকারে গৃহদাহ! কার চালে কথা বলছেন সৈয়দ আশরাফ??
শফিক রহমান : হঠাৎ সরকারে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। ১৪ দলের অভ্যন্তরের ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্ঠা করছেন কেউ কেউ। জঙ্গি সমস্যা নিয়ে যখন সারাদেশে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে, যখন ধরা পড়ছে একের পর জঙ্গি, যখন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়ছে তখন সরকারের ভেতর গৃহদাহ সৃষ্ঠি হচ্ছে কেন?
এনিয়ে এখন সারাদেশে চলছে আলোচনা সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে-হঠাৎ করে সৈয়দ আশরাফ ১৪ দলের ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্ঠা করছেন কেন? হাসানুল হক ইনুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সৈয়দ আশরাফ কি আগুন সন্ত্রাসী গুপ্তহত্যাকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? তানাহলে এই মূহুর্তে সৈয়দ আশরাফের মুখ থেকে সরকার বিরোধী বক্তব্য আসবে কেন? এ প্রশ্ন এখন স্বাধীনতা স্বপক্ষের সকলের।
টিএসসিতে ছাত্রলীগের সমাবেশে জাসদ বিরোধী বক্তব্যের পর থেকে জাতিরকন্ঠে একাধিক ফোন এসেছে। তারা বলেছেন, ১৪ দলের অভ্যন্তরের ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্ঠা করছেন কেউ কেউ। জঙ্গি সমস্যা নিয়ে যখন সারাদেশে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে, যখন ধরা পড়ছে একের পর জঙ্গি, যখন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়ছে তখন সরকারের ভেতর গৃহদাহ সৃষ্ঠি হচ্ছে কেন?
প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কার চালে কথা বলছেন সৈয়দ আশরাফ??
গত সোমবার টিএসসিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট নিয়ে জাসদের ভূমিকার সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ। এতে তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সমস্ত প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দায়ী ।একই সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরো বলেন, ‘এই দলের একজনকে আবার মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে, যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন করতে হবে।
ওই সমাবেশে জাসদকে ‘হঠকারী’ সংগঠন আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাসদ নামক এই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে পরিচালিত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে- বাংলাদেশ যাতে কোনোদিনই একটি কার্যকরী রাষ্ট্র হতে না পারে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের (জাসদ) এই ইতিহাসটা আপনাদের বললাম; আপনারা হয়তো জানেন না। আমরা কিন্তু এই ইতিহাসকে ভুলতে কোনোদিন রাজি হইনি। কারণ দিস ইজ দ্যা পার্ট অব হিস্ট্রি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘কিভাবে ষড়যন্ত্র করে একটি সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যদি তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সমস্ত পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি না করতো, তাহলে আজকের বাংলাদেশ একটা ভিন্ন বাংলাদেশ হত।’বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, ‘এই দেশটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছিল তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক-বাহকরা।
এদিকে সৈয়দ আশরাফের ওই ব্ক্তব্যকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে ঐক্য থাকবে কি না তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।জাসদ নেতারা সরাসরি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে ঐক্য থাকবে কি না তা আওয়ামী লীগকেই ঠিক করতে হবে বলে মন্তব্য করেছে জাসদ।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন জাসদ নেতারা।মানববন্ধনে জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, নিজেদের মধ্যে কাঁদাছোঁড়াছুরি না করে মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করুন।তিনি বলেন, ১৪ দলের ঐক্য সুদৃঢ় থাকবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই।
সৈয়দ আশরাফের ওই বক্তব্যের রেশ ধরে আজ জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ।
জাসদকে সংসদে আনা ও সেই দল থেকে মন্ত্রী করার বিষয়টি তুলে ধরে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনকার গুপ্তহত্যাকারীদেরও ভবিষ্যতে সংসদে নিয়ে আসতে পারেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংসদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।সংসদের আইনপ্রণয়নের কাজ শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো নীলকণ্ঠ। বিষ খেয়ে হজম করতে পারেন। উনি সমস্ত বিষ খেয়ে হজম করে…জাসদ আজ সংসদে আছে। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে…এখন যারা গুপ্তহত্যা করছে, তাদেরও উনি সংসদে নিয়ে আসবেন।’
আলোচনার শুরুতে সভাপতির আসনে বসা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াকে উদ্দেশ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘টেলিভিশনে আপনাকে এবং সরকারি দলকে বেশি দেখায়। কারণ হলো, তথ্যমন্ত্রী জাসদ। আমরা ছাত্রলীগ করতাম।
একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এক বিছানা থেকে উঠে এসে উনি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। গুনে গুনে আমাদের ২০ লাখ লোককে হত্যা করল। সেদিন গণবাহিনী গঠন করে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা না করলে দেশের দুর্দিন হতো না। বঙ্গবন্ধুর মতো এত বড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না। সে জন্য জাতি আজ পর্যন্ত ভুগছে।’