হঠাৎ নিশ্চুপ নিরব হাজী সেলিম মাঠে নেমেছেন মিন্টু ও সালাম
শফিক আজিজ.ঢাকা: হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন হাজী মোঃ সেলিম ।অন্যদিকে হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছেন বিএনপি সমর্থক মেয়র প্রার্থী উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং দক্ষিণে আব্দুস সালাম। বিএনপির এই হাই প্রোফাইল দুই প্রার্থী বুধবার মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের জন্য আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আব্দুস সালামের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত বিএনপির সিটি নির্বাচনে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।বুধবার ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার দুই ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার আউয়াল।
অন্যদিকে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার একান্ত সচিব ফারুক উল ইসলাম সেলিম ও মহানগর বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দল নির্বাচন করবে না- এটাও বলেনি। তাই আগে থাকতে ফরম তুলে রাখছি। যদি দল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তখন প্রত্যাহার করা হবে।বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সালাম অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পিরিচিত।
এরশাদের আমলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করা সালাম বিএনপির ঢাকা মহানগরের যে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন, খোকা ছিলেন সেই কমিটির আহ্বায়ক। নতুন কমিটিতে সালাম আছেন উপদেষ্টা হিসাবে।
বাবার হয়ে মনোনয়নপত্র নেওয়ার পর তাফসির আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা যাবে কি না তা নিয়ে আমরা কনসার্ন আছি। আমরা ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে কথা বলব। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু গত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার নামে নাশকতার কয়েকটি মামলাও রয়েছে।মামলার কারণে নির্বাচন করতে কোনো ‘সমস্যা হবে না’ বলে উল্লেখ করে তাফসির বলেন, আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেই তারা সব প্রক্রিয়া করছেন।
বুধবার ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার দুই ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার আউয়াল।অন্যদিকে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার একান্ত সচিব ফারুক উল ইসলাম সেলিম ও মহানগর বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম।
অন্যদিকে হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন হাজী মোঃ সেলিম ।সাংসদ পদ ছেড়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হতে মনোনয়নপত্র নেওয়া হাজি সেলিমের ‘হঠাৎ নিস্ক্রিয়তায়’ শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।গত কয়েক দিন সিটি নির্বাচন নিয়ে সরব থাকলেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুধবার সকাল থেকে নিজের লালবাগের বাসায় অবস্থান নিয়ে আছেন। তিনি কারও সঙ্গে দেখা করছেন না, ফোনও ধরছেন না।
সকাল থেকে জনা ত্রিশেক কর্মী-সমর্থক ওই বাসার নিচতলায় হাজি সেলিমের অফিসে অপেক্ষায় থাকলেও কর্মচারী বলছেন- স্যার ঘুমাচ্ছেন। এখন কথা বলবেন না।এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যেও কানাঘুষা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্য সিটি নির্বাচন থেকে সরে আসছেন।
হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, উনার পক্ষ থেকে গতকাল স্পিকারকে পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। তবে সময় আছে। আমরা এখনো আশাবাদী।অন্যদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হাজি সেলিমের নামে কোনো পদত্যাগপত্র তাদের কাছেই যায়নি।সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নিয়ম অনুযায়ী হাজি সেলিমকে সাংসদ পদ ছাড়তে হবে এবং তা করতে হবে ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই।
তার বাসার সামনে অবস্থানকারী এক কর্মী নাম বলেন, ভাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। তার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও বক্তব্য রাখেন হাজি সেলিম, যিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন। ওই বক্তব্যেও তিনি পদ ছাড়ার ইংগিত দিয়েছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ থেকে নির্বাচন করতে ইতোমধ্যে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন, যার বাবা মোহাম্মদ হানিফও এক সময় ঢাকার মেয়র ছিলেন। বলা হচ্ছে, সাঈদ খোকনকেই এ নির্বাচনে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এ জন্য হাজি সেলিমকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এ বিষয়ে সাঈদ খোকন বুধবার বলেন, হাজি সেলিম নির্বাচনে যাচ্ছেন না বলে তিনি শুনেছেন। তবে দলের ঊর্ধ্বতন কেউ এ ব্যাপারে তাকে নিশ্চিত করেননি।২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে মঙ্গলবার সাঈদ খোকনের পাশাপাশি হাজি সেলিমও মনোনয়নপত্র কেনেন। খোকন দলের সমর্থন পাওয়ার কথা জানালেও হাজি সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, তার বিশ্বাস যে শেষ পর্যন্ত দলের সমর্থন তিনিই পাবেন।
স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি ঠিক করতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কমিটির দুই শীর্ষ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,প্রার্থিতার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মায়া বলেন, ২৯ মার্চ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। নেত্রী যাকে সমর্থন দেবেন, তার পক্ষেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে।আর কামরুল বলেন, প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত নয়। এ বিষয়ে নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন মনোনয়নপত্র দাখিলের পর। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।