• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

হজ ব্যবস্থাপনায় অথর্ব সৌদি কতৃপক্ষ্। বিক্ষুদ্ধ ইরান ইন্দোনেশিয়া নাইজেরিয়া


প্রকাশিত: ২:৩৫ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

hagi iran-www.jatirjhantha.com.bdবিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা    সৌদি আরবের মিনায় পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিজ​ দেশের হাজির মৃত্যুর ঘটনায় আজ শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। ছবি এএফপিমিনায় পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যুর ঘটনায় চাপে পড়ে গেছে সৌদি আবর। এ বিষয়ে ইরানের পাশাপাশি সরব হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। মুখ খুলেছেন নাইজেরিয়ার হজযাত্রী দলের প্রধানও। একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে, হজের ব্যবস্থাপনা সৌদি আরবের হাতে থাকা উচিত না মুসলমান দেশগুলো যৌথভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে।

গত ২৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮৫০ হাজি। এত হতাহতের পরও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানান হয়নি বা জানান সম্ভব হয়নি, আসলে কোন দেশের কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত যে হিসাব তাঁর পুরোটাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উদ্যোগ থেকে পাওয়া। অথচ ওই ঘটনার পর থেকে যতটুকু জানা গেছে তা সৌদি সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকে। অন্য কোনো সূত্র থেকে তা যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরপরই একজন সৌদি যুবরাজ এ ঘটনার জন্য ‘আফ্রিকান’ হাজিদের দায়ী করে বিবৃতি দিলেন। এত বড় ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে এই ধরনের আলটপকা মন্তব্য করা ঠিক হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।

যদি ঠিকই হয়, তাহলে সৌদি বাদশা কেন সেদেশের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের নেতৃত্বে একটি কমিটিকে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বললেন। হজের কয়েক দিন আগেও গত ১১ সেপ্টেম্বর মক্কার কাছে ক্রেন ভেঙে শতাধিক হাজি নিহত হন। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে। দুটো ঘটনাই আলাদা, কিন্তু এক সঙ্গে ২০ লাখের মতো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির জড়ো হওয়ায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সৌদি সরকার আসলেই কতটা ভেবেছিলেন সে প্রশ্ন উপস্থিত হাজি এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর।
মিনায় পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিজ​ দেশের হাজির মৃত্যুর ঘটনায় আজ শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। ছবি এএফপিইরানের রাজধানী তেহরানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভে সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে। তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের দাবি, তাদের দেশের অন্তত ৬০ জন হাজি আহত হয়েছেন। পুরো ঘটনা নিয়ে নিজেদের অভিযোগ জানাতে তেহরান সেদেশের সৌদি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ারকে ডেকে পাঠায়। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই দুঃখজনক ঘটনার দায়িত্ব সৌদি সরকারের নেওয়া উচিত। আর আমাদের উচিত হবে না, যে অব্যবস্থপনা ও ভুলের কারণে এই বিপর্যয় তা এড়িয়ে যাওয়া।’

সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো দেশই তাদের কতজন নাগরিক নিহত বা আহত হয়েছে তার হিসাব পায়নি। সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ২৩৬, ইরান ১৩১, মরক্কো ৮৭, ভারত ১৪, মিশর ১৪, সোমালিয়া ৮, সেনেগাল ৫, তানজানিয়া ৪, তুরস্ক ৪, আলজিরিয়া ৩, কেনিয়া ৩, ইন্দোনেশিয়া ৩, বুরুন্ডি ১ ও নেদারল্যান্ডসের ১ জন মারা গেছেন।বিশ্বের সবচেয়ে মুসলমান জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বলেছেন, হজ ব্যবস্থাপনার অবশ্যই উন্নতি হওয়া উচিত যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
নাইজেরিয়ার হজ প্রতিনিধি দলের প্রধানের মতে মিনার ঘটনার জন হাজিদের দায়ী করে সৌদি সরকার ‘ভুল’ করেছে। তিনি বিবিসির রেডিও ফোরকে বলেন, ‘আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানাব, (হজযাত্রীরা) নির্দেশ মানেননি, এই ভুল অভিযোগ যেন না করেন।’

আল দিয়ার নামে একটি আরব দৈনিকে বলা হয়েছে, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ গত বৃহস্পতিবার মিনায় আসেন বাদশাহর (তাঁর বাবা) সঙ্গে বৈঠকের জন্য। প্রিন্সের সঙ্গে ছিল ৩৫০ সদস্যের নিরাপত্তা দল। প্রিন্সের নিরাপত্তার কারণে চলাচল একমুখী করা হয়েছিল এবং এত বড় ঘটনার জন্য এর দায় আছে। যদিও সৌদি আরব এই খবর ‘ঠিক না’ বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হজ ও ট্রাভেল এর পরামর্শক মোহাম্মদ জাফরি বিবিসিকে বলেছেন, ‘যেকোনো ঘটনার পরে, এটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা। কিন্তু এটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা না। এটা মানুষের অদক্ষতা।’ সৌদি আরব যাতে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উন্নত করে সে জন্য ব্রিটিশ সরকারকে প্রভাব খাটানোর আহ্বান জানান জাফরি।