হজ তাবলীগ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য-জাতীয় সংসদেই পদত্যাগ করলেন লতিফ সিদ্দিকী
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: জাতীয় সংসদের ১৩৩ ও টাঙ্গাইল ৪ আসন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন লতিফ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন শুরু হলে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ফ্লোর নেন। তিনি এসময় একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর পদত্যাগের চ‚ড়ান্ত ঘোষণা দেন। একটি সাদাখামে পদত্যাগ পত্র পৌঁছে দেয়া হয় অধিবেশন কক্ষেই স্পিকারের কাছে। স্পিকার এসময় চিঠিটি খুলে দেখেন। বিটিভির সৌজন্যে সংসদ টিভিতে এসময় সংসদের অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হজ ও তাবলীগ জামায়াত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় তিনি মন্ত্রিসভা, দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। এবিষয়ে লতিফ সিদ্দিকী সংসদে বলেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আমাকে হেয় করেছে। একই সাথে আমাকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানাতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই নিজেকে বাঙ্গালী, মুসলিম ও একজন আওয়ামী লীগার বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, এই পরিচয় মুছে দেয়ার মতো শক্তি পৃথিবীর কারো নেই। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার ধর্ম কুঠরিতে আলোড়ন আন্দোলন দেখা দিয়েছে। আমি বলতে চাই আমি ধর্মবিরোধী নই। আমি সাচ্চা মুসলমান। ধর্ম অনুরাগী। যে ফরজ একবার করার কথা বলা হয়েছে সে হজ্জ আমি নিজেও করেছি। যারা ফরজ তরক করে সুন্নত মুস্তাহাব নিয়ে ছুটে তাদের সাথে আমার ভিন্নতা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক জীবনে এখনো যেমন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করছেন ভবিষ্যতেই এর ব্যতিক্রম হবে না বলে জানান লতিফ সিদ্দিকী।
সংসদে দেয়া তার বক্তব্যে তিনি বলেন, সবার আগে ঠিক করতে হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি হবে। বাঙালি আত্মপরিচয়ের সড়ক ঘোষণায় স্কুল ও কলেজ জীবনে চারবার বহিস্কার হতে হয়েছে। এমপি পদ থেকে তাকে অপসারণে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, আমি অনুমিত হয়েছি আমার নেতার অভিপ্রায় আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করি। কর্মী হিসেবে আমি সব সময় অনুগত ছিলাম। কারও বির“দ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। জাতীয় সংসদের ১৩৩ নম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।
পরে লতিফ সিদ্দিকী স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে জানান। সন্ধ্যার কিছু সময় পর লতিফ সিদ্দিকী সংসদ অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথম সারির নির্ধারিত আসনে বসেন। নিউ ইয়র্কে পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামায়াত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার জেরে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ঘোষণা দিয়েছিলেন সংসদ থেকে তিনি পদত্যাগ করবেন।
অধিবেশনে বক্তব্য শেষ করেই তিনি তার পদত্যাগের চ‚ড়ান্ত ঘোষণা দেন। তবে তিনি কাউকে দোষারোপ করেননি। বরং তার বক্তব্যে দেশবাসী কোনো কিছু মনে করলে নতমস্তকে ক্ষমা চান। এরপর স্পিকারের কাছে তার পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী হজ ও ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তি করার পর আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই তিনি মন্ত্রীত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তি করেন লতিফ। এরপর তিনি ভারত হয়ে দেশে ফেরেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয় ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হানার জন্যে। কারাগারে যেতে হয় তাকে। এরপর নির্বাচন কমিশনে যেয়ে লতিফ সিদ্দিকী সর্বশেষ সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।