• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

হজে বলিউড অভিনেতা আমির খানের ‌‌‍‌‌’তালাশ’-মাওলানা জামিলের ‌‍‍’দোয়া’


প্রকাশিত: ৬:৫১ পিএম, ৩০ জুলাই ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৮৯ বার

amir-khan-with-maolana-www.jatirkhantha.com.bdনুরুন নবী:  হজ করতে গিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। দেখা হয় তাবলীগ জামায়াতের আমির মাওলানা তারিক জামিলের সঙ্গে। মাওলানা তারিক জামিল সাক্ষাতের সময় চাইলে তাঁকে আমির খান মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেন। তবে ৩০ মিনিটের জায়গায় দুইঘণ্টা পার হয়ে গেলেও মাওলানার মুগ্ধতা ছাড়েনি আমির খানকে।

দ্বিতীয় সাক্ষাতে মাওলানা তারিক জামিলকে ২ ঘণ্টা সময় দেন এ বলিউড অভিনেতা। কিন্তু টানা ছয় ঘণ্টা পর নিজেই উঠে যান মাওলানা তারিক জামিল। একজন বলিউড জগতের তারকা অপরজন তাবলীগ জামায়াতের। এ দুই তারকার কথোপকথনের সারাংশ শুনুন মাওলানা তারিক জামিলের মুখেই।

‘তিনি আমাকে মেসেজ পাঠালেন, আমি জীবনে কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। আপনিই প্রথম মানুষ যার দ্বারা আমি প্রভাবিত। আমি কি তাকে জাদু করেছিলাম? না মুহাব্বত, প্রেম। আমির খান আমাকে বললেন, আমাকে মুহাব্বত দিন, প্রেম দিন, আমার সঙ্গে দেখা করুন। আমাদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগই ছিল না। আল্লাহ শহিদ আফ্রিদিকে পাঠিয়ে দিলেন। শহিদ আফ্রিদি দু’জনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করলেন। আমি যাওয়ার পর তিনি বললেন, মাওলানা শুধু আধা ঘণ্টা সময়। তিনি মনে করেছিলেন, আমি বলব, মিয়া সাহেব কি করছেন এসব, গান করেন, নাচ করেন, অভিনয় করেন। আপনার জন্য তো দোজখ আবশ্যক হয়ে গেছে। তওবা করো!

আমি তো নিজেই একসময় কলেজ স্কুলজীবন পার করে এসেছি। আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দিয়েছেন। তাবলীগ জামায়াতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কই ছিল না। এক বাঙ্গালি ছিল যে নাকি ‘গাশত’ করত। আমি তার দ্বারা বিন্দু পরিমাণ প্রভাবিত হয়নি। কিন্তু আমার বন্ধু প্রভাবিত হয়। তার কারণেই তিন দিন লাগিয়েছিলাম। এক সময় তো আমি আমার স্কুলের শ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলাম। কলেজেরও। জুনায়েদ জামশেদ কি তার চেয়েও বেশি।

যাক, আমির খান খুব মনযোগের সঙ্গে বসেছেন। আমি বসেই তার সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে গল্প শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পরই আমি বোঝতে পারলাম, ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আমি যতটা জানি ততটা তিনি জানেন না। তার জ্ঞানের ওপর আমার জ্ঞানের প্রভাব বিস্তার করে। তার পথেরই জ্ঞান। সে তো হয়রান। এটা কি ওয়াজ হচ্ছে, কখনো দিলিপ কুমার কখনো রাজকাপুর, কখনো মদন মোহন। এখানেই আধা ঘণ্টা শেষ যায়। তার সকল ভয় দূর হতে পোনে এক ঘণ্টা থেকেও ২৫ মিনিট চলে যায়। আমি বললাম, ভাই! যেহেতু আপনি হজে এসেছেন আপনি অনুমতি দিলে আমি আপনার নবীর হজ সম্পর্কে শোনাবো। তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই শুনান। আমি শুয়া একঘণ্টা বললাম। তিনি এদিক থেকে সেদিক করেননি। সোয়া এক ঘণ্টা একভাবেই বসা ছিলেন। মানুষ তো মুহাব্বতের ভিখেরি আর আমরা ফতোয়া দেওয়া শুরু করি। দুই ঘণ্টা পর আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই নিচে চলে এসেছেন।

হজের পর আমি বললাম আবারও কি একবার সাক্ষাৎ হতে পারে? বললেন, অবশ্যই। তিনি মদিনায় গিয়ে মেসেজ পাঠালেন, আমি মদিনায় চলে এসছি। আমি বললাম, আমি মদিনায় চলে আসব। তিনি আমাকে ১৪ তারিখের সকাল ৪-৬ টা পর্যন্ত সময় দিলেন। আমি, জুনায়েদ ও আরও একজন নিয়ে চলে গেলাম। ৪ টা বাজে আমাদের শুটিং শুরু হল। ৪ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ধারাবাহিক শুটিং হল। কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও তিনি নড়ে চড়েননি। এরপর আমরাই উঠে গেলাম।

পরবর্তীতে এক পরীক্ষা চলে এল। আমি ইজতেমায় ছিলাম। এক মেসেজ আসে, আমার ছবি তালাশ মুক্তি পাচ্ছে তার জন্য দোয়া করবেন। আমি বললাম, এবার হয়েছে। উত্তর দেওয়াও আবশ্যক, দোয়াও করা যাচ্ছে না। যখন মেসেজটি আসে আমার সামনে দশ বার জন ওলামা বসা ছিল। তারা বললেন, ভাই তোমার ফিল্ম তুমিই উত্তর দাও। আমি সারাদিন চিন্তা করলাম, কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না। এমন এক উত্তর খুঁজছিলাম যেন প্রাণও বেঁচে যায়, উত্তরও হয়ে যায়। পরের দিন চলে যায় তাও কোনো উত্তর পেলাম না। আমি আসরের ওযু করছিলাম তখন আল্লাহ তায়ালা এক উত্তর মাথায় ঢেলে দিলেন। আমি তারাতারি তাকে মেসেজ পাঠালাম। সৃজনশীলতা আল্লাহ সবাইকে দেন না। কয়েকজনকে দেন। আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে এটা দান করেন। আমি তোমার সঙ্গে যতক্ষণ থেকেছি, মনে হয়েছে তুমি সৃজনশীল মানুষ। আর যারা এ ধরনের লোক হয় তারা নিজেদের সফলতার চিন্তা করে না। তারা তাদের কাজ করেই যায়। দ্রুত তার মেসেজ আসল, আপনি ঠিক বলেছেন। আপনি ঠিক বলেছেন।

আমি হংকং থেকে আরেকবার ম্যাসেজ পাঠালাম, ভাই আমি কি আপনাকে ফোন করতে পারি। কিছুক্ষণ পর ফোন আসল, আমি কনফারেন্সে ছিলাম। আপনার ম্যাসেজ দেখেই আমি বের হয়ে এসেছি। আপনার সঙ্গে কথা বলেই তবে আমি ফিরে যাবো। কথা বলতে বলতে তিনি বললেন, আপনার দোয়ায় আমার ছবি সফল হয়েছে। আমি (হাসতে হাসতে) বললাম, হে আল্লাহ আমি কিছু করিনি।
বন্ধুরা! ভালবাসা ছড়িয়ে দাও, ঘৃণা তো আগে অনেক ছড়িয়েছ।