সম্প্রতি ‘স্বাস্থ্য খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয় বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা এই খাতের দুর্নীতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরছে।
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির যে চিত্র ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির গবেষণা রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ বলেই আমাদের ধারণা। কেননা, দেশব্যাপী বিস্তৃত এই খাতটির অনিয়ম ও দুর্নীতি এমন সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
টিআইবির গবেষণা টিম এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে ভুক্তভোগী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগনির্ণয় কেন্দ্র ও দালালদের কমিশন ভাগাভাগির সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। চিকিৎসাসেবার মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা কেন এই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবেন?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম টিআইবির রিপোর্টকে ‘ঢালাও অভিযোগ’ বলে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কি জোর দিয়ে বলতে পারবেন যে, তাঁর মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে কোনো আর্থিক লেনদেন হয় না? অবশ্যই হয়। বেশ কিছুদিন আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি রিপোর্ট করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও শোরগোল তুলেছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংস্থার রিপোর্টই সত্য প্রমাণিত হয়। অতএব, স্বাস্থ্য খাতের পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হলে মন্ত্রী মহোদয়ের উচিত টিআইবির দেওয়া তথ্য–উপাত্তকে সূত্র ধরে বিভাগীয় তদন্ত জোরদার করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। কতিপয় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির জন্য আমাদের স্বাস্থ্য খাতের এত সব অর্জন ভূলণ্ঠিত হতে দেওয়া যায় না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত সেগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।