• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘স্বপ্নের ডিজিটাল সিলেট গড়বেন কামরান’


প্রকাশিত: ৫:০৯ পিএম, ২৫ জুলাই ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫২ বার

 

সিলেট থেকে বিশেষ প্রতিনিধি : এবার স্বপ্নের সিলেট দেখবে নগরবাসী। বিদ্যুৎ, গ্যাস সমস্যা সমাধান করে নতুন কোনো ট্যাক্স না বসিয়ে সিলেটকে বদলে দেয়া হবে বলে ৩৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সাবেক সিলেট মেয়র ও প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ আজ আর স্বপ্ন নয়, সময়ের ব্যাপার। দেশের অগ্রগতি ও অতীতে যেভাবে নৌকার ওপর আস্থা রেখেছিলেন, আমার বিশ্বাস ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে তার অন্যথা হবে না। নৌকা বিজয়ী হলে সিলেটে বইবে উন্নয়নের জোয়ার।’

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেললেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এটাই আমার শেষ নির্বাচন।’ নির্বাচন নিয়ে গঠনমূলক সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের আহ্বান জানান তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে সিলেটের মির্জা জাঙ্গাল এলাকার একটি হোটেলে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে সিলেট’ স্লোগান নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা কালে কামরান বলেন, এবার সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী গড়ে তোলা হবে।

ইশতেহার তুলে ধরে কামরান বলেন, ‘আশা করি, উৎসবমুখর নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত হয়তো আমি বেঁচে নাও থাকতে পারি। নির্বাচিত হলে মৃত্যুর আগে ভাবতে পারব, সিলেটের মানুষ আমাকে ভালোবেসে রায় দিয়েছে।’ সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়ে কামরান বলেন, সাংবাদিকের তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে কাউকে ওঠাতে পারে। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে সহায়তা চান তিনি।

কামরান নানা বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, নতুন কোনো করারোপ ছাড়াই নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে নগরবাসীকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরই কি নতুন করারোপ করা হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, সিটি করপোরেশনের করারোপের ক্ষেত্র একটি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার বাইরে কোনো করারোপ করা হবে না।

কামরান বলেন, সিলেটকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নগর এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশ্বমানের স্কুল, কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।প্রতি মাসে নগরীতে ওয়ার্ডভিত্তিক মেডিকেল ক্যাম্পসহ স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিশ্বমানের নগর ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।

বিদ্যুৎ-বিভ্রাট থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে পুরো নগরে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হবে।নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে সব রাস্তা প্রশস্তকরণ, একাধিক স্ট্যান্ড, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড, ট্রাক টার্মিনালসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

ফুটপাত হকারমুক্ত করার পাশাপাশি চারটি হকার মার্কেট করা হবে। এ ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশেষ মার্কেটের ব্যবস্থা করা হবে। লালদীঘি মার্কেট ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি। ওই ভবনে স্বল্প আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।জলাবদ্ধতা নিরসনে জন্য খাল উদ্ধার করে খনন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার কথাও জানালেন তিনি। সুরমা নদী খননে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সুরমা নদী খননের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্যাসসংযোগ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার বিশেষ পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে কামরান বলেন, গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকায় আবাসন ব্যবসা স্থবির হয়ে আছে। নতুন বাসাবাড়িতে গ্যাসসংযোগ না থাকায় জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নতুন গ্যাসসংযোগ চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও তুলে ধরলেন তিনি।নগরবাসীকে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষে পুরোনো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংস্কার ও নতুন প্ল্যান্ট করার ঘোষণা রয়েছে ইশতেহারে।

আধুনিক নগর পরিবহ ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগের কথা রয়েছে ইশতেহারে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থলে আধুনিক নগরপার্ক নির্মাণ, সুরমা নদীর দুই পারের আধুনিকায়ন, খেলার মাঠ, দিঘি আর টিলা সুরক্ষা, অত্যাধুনিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা তুলে ধরেন তিনি। তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে দুরে রাখতে খেলাধুলার প্রসারের উদ্যোগের বিষয়টি কামরানের পরিকল্পনায় রয়েছে। এ জন্য মেয়র কাপ ফুটবল, ক্রিকেট চালুর কথা জানিয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণাও দেন তিনি।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, প্রবাসীদের সিলেটে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেছেন কামরান। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য হেল্প ডেস্কসহ অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। নারীর প্রতি সহিংসতা ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। নারীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন না হওয়ায় পরিকল্পিত উন্নয়ন থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে উদ্যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

নগরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব সংস্থার সমন্বয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে কামরানের। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিতে চান।সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলদের যথাযথ সম্মান দিয়ে সবাইকে সরাসরি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত করার ভাবনাও তুলে ধরেন ইশতেহারে।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আসাদ উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।