• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্নাইপার গানে গ্যারাকলে র‌্যাবের কর্নেল তারেক-৩২ দিনের রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তি


প্রকাশিত: ২:৪৪ এএম, ৩ ডিসেম্বর ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৮১ বার

SSSSSSSSSSSSSSSSSSSSS

তারেক সাঈদ মোহাম্মদস্টাফ রিপোর্টার.ঢাকা:
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ওই ঘটনার এক দিন পর স্নাইপার গান দিয়ে অনুশীলন করেছিলেন। এ বিষয়ে সদর দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেননি তিনি।
অথচ ফায়ারিং অনুশীলনের জন্য র‌্যাব সদর দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয় এবং অনুশীলন শেষে সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অস্ত্র নিয়ে অনুশীলনের জন্য র‍্যাব সদর দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয় এবং অনুশীলন শেষে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, অপহরণের দিনে রাতেই অপহৃত ব্যক্তিদের হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
গত ৯ অক্টোবর লে. কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খানের পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার এক দিন পর অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল র‌্যাব-১১-এর সে সময়কার অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ অনুমোদন ছাড়াই স্নাইপার গান ব্যবহার করেন। র‌্যাব-১১-এর কার্যালয়ের পেছনের ফাঁকা জায়গায় বালুর বস্তা (স্যান্ডব্যাগ) ব্যবহার করে নয়টি গুলি করেন। ওই সময় তাঁর জন্য ফায়ারিং রেঞ্জ বরাদ্দ ছিল না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই দূর থেকে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করেন। সাধারণ অস্ত্র ব্যবহার করে এই কাজ করা সম্ভব না। মডেল ভেদে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে ৬০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ মিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা সম্ভব। র‍্যাব-১১-এর কাছে দুটি স্নাইপার রাইফেল ছিল।

র‍্যাব-১১-এর ওই প্রতিবেদনে সদর দপ্তরকে জানানো হয়, গুলি ছোড়ার (ফায়ারিং) জন্য আগে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে মৌখিক কোনো অনুমোদন ছিল কি না, জানা নেই। তবে লিখিত অনুমোদনের কোনো নথিপত্র ওই ব্যাটালিয়নে সংরক্ষিত নেই। এ ছাড়া গুলি ছোড়া অনুশীলনের পরে র‌্যাব সদর দপ্তরে এ বিষয়ে কোনো লিখিত প্রতিবেদনও পাঠানো হয়নি।
স্নাইপার গান দিয়ে অনুশীলন ও ব্যবহার করা গোলাবারুদের হিসাব চেয়ে গত ৩ অক্টোবর র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর র‌্যাব-১১-এর সহকারী পরিচালক রবিউল হক একটি হিসাব পাঠান। একই বিষয়ে ৮ অক্টোবর র‌্যাব সদর দপ্তরের আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। গত ৯ অক্টোবর এই চিঠির জবাব দেন র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খান।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং এর পরদিন ওই নদী থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা মডেল থানায় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। অন্যদিকে চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক একটি মামলা করেন।
এই ঘটনায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

৩২ দিনের রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তি-

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ গতকাল বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ পুলিশ একে একে ছয় দফায় ৩২ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি সাত খুনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেন৷
গতকাল সকাল আটটার দিকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সাত খুনের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে বেলা সাড়ে তিনটায় তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারত৷ গতকাল চিঠির মাধ্যমে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়ে তাঁর সম্পর্কে আরও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ আদালতে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন এবং হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ বিবরণ দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে র‌্যাবের অন্য দুই সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানা সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
সাঈদকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের পর প্রথমে পাঁচ দিন, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় দ্বিতীয় দফায় আটদিন, একই মামলায় তৃতীয় দফায় পাঁচ দিন, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ দুজনকে হত্যার মামলায় চতুর্থ দফায় পাঁচ দিন, ৯ জুন পঞ্চম দফায় পাঁচ দিন এবং সর্বশেষ ষষ্ঠ দফায় ১৪ জুন চার দিনের রিমান্ডে নেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

নূর হোসেন সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে ভারত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার (রেড এলার্ট নোটিশ) ভিত্তিতে কলকাতায় গ্রেপ্তার করা হয় নূর হোসেনকে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান  বলেন, ভারত নূর হোসেনের ব্যাপারে আরও কিছু তথ্য চেয়েছে। সরকার এখন সেসব তথ্য সংগ্রহ করছে। নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নূর হোসেনকে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ব্যাপারে ভারত গতকাল আরও তথ্য চেয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে গতকাল একটি চিঠি পাঠিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব তথ্য পাঠানোর অনুরোধ জানায়।
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নূর হোসেনের মতো পলাতক অপরাধীদের ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তিই হচ্ছে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে ভালো পথ। তাই এ চুক্তির আওতায় তাঁকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তা ভারতের কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে চুক্তিটি সই হওয়ার পর এখনো এর আওতায় দুই দেশের কোনো অপরাধীকে হস্তান্তর করা হয়নি।