স্ত্রীর রাজনীতির কাছে হার মানলেন না প্লেবয় ইমরান
দ্য ডন অবলম্বনে এস রহমান: ক্রিকেটার জীবনে ইমরানের ছিল এক প্লেবয় ইমেজ।সেই প্লেবয় ইমেজ নিয়ে বহু নারীর হৃদয় হরণ করেছেন তিনি।রেহামকে বিয়ে করার পর ইমরানের প্লেবয় ইমেজে ভাটা পড়ে।এদিকে তেহরিক ইনসাফ দলে ইমরানের রাজনিতী করতে গিয়ে রেহাম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে ইমরানের ইমেজ ছাপিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল।রেহমের এই জনপ্রিয়তা ভাল চোখে দেখছিলনা ইমরান। আর এটাই কাল হল সম্পর্কে..। এর ফলেই ভেঙ্গে গেল প্লেবয় ইমরানের দ্বিতীয় ইনিংস।
বিয়ের আসরে ইমরান খান ও রেহাম খান—ফাইল ছবিইমরান খানের নতুন সংসারটাও যে ভেঙে গেছে, এ খবর এরই মধ্যে জেনে গেছেন সবাই। কিন্তু কেন ভাঙল, সেটি নিয়েই এখন যত জল্পনা-কল্পনা। বিবিসির সাবেক সংবাদ উপস্থাপক রেহাম খানের সঙ্গে ইমরানের দ্বিতীয় বিয়েটাকে সবাই যে ‘স্বাগত’ জানিয়েছিলেন, একথা বলা যাবে না।
এই বিয়ে নিয়ে অসন্তোষ ছিল খোদ ইমরানের বাড়িতেই। তাঁর বোন আলিমা খান প্রথম থেকেই এই বিয়েটা মেনে নিতে পারেননি। গণমাধ্যমে প্রকাশ্যেই তিনি ভাইয়ের বিয়ের বিরুদ্ধে কড়া কড়া মন্তব্য করেছিলেন।
দশ মাসের মাথায় ভেঙে যাওয়া সংসারটা খুব সুখের ছিল না। বিয়ের পর থেকেই আসলে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এই দম্পতি।
রক্ষণশীল পাকিস্তানে রাজনীতির ময়দানেও এই সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক কথাবার্তা চালু ছিল। রেহামের পশ্চিমা ঘরানার পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়ে বারবারই ঝড় উঠেছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই তো কিছু দিন আগে উপনির্বাচনে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রার্থীর প্রচারণায় রেহামের উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা।
এতে নাকি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন রেহাম।
আসলে কী ঘটেছিল ইমরান-রেহামের মধ্যে? পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্য ডন এক বিশেষ সূত্রের বরাতে লিখেছে, মূলত রেহামের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাই এই সম্পর্কের ইতি টেনে দিয়েছে। বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার একটা পারিবারিক চাপ প্রথম থেকেই ছিল ইমরানের ওপর। রেহামকে তালাক দিয়ে সেই ঝামেলা থেকেই কি মুক্ত হলেন ইমরান?
অভিযোগ উঠেছে, স্বামীর বিপুল জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে নিজের একটি রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন রেহাম। প্রথম দিকে বিষয়টিকে ইমরান খুব একটা পাত্তা দিতে চাননি। কিন্তু পরে দশজনের কানকথায় তাঁরও সন্দেহ হয়। উপনির্বাচনের সময় বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট কথাবার্তা হলেও ইমরান প্রকাশ্যে তাঁর স্ত্রীকেই সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতর বিষয়টা নিয়ে ক্ষুব্ধই ছিলেন। তিনি রেহামকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই করেছেন।
ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ২০১৩ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রক্ষণশীল এলাকাগুলোতে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছিল। পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক ক্ষমতা এই মুহূর্তে তেহরিকের হাতেই। ইমরান রাজনৈতিক দিক দিয়ে তালেবান অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোন হামলার ঘোর বিরোধী।
তালেবানের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্কও গোপন বিষয় নয়। এই অবস্থায় যদি শুধু রাজনীতির কারণেই রেহামকে তালাক দিয়ে থাকেন, সেটা পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে জানা ব্যক্তিদের খুব একটা অবাক করবে না। তবে পাকিস্তানি গণমাধ্যমই জানিয়েছে, ইমরান-রেহাম পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই ইতি টেনেছেন এই সম্পর্কের।
ক্রিকেটার জীবনে ইমরানের ছিল এক প্লেবয় ইমেজ। অনেক নারীরই স্বপ্ন-পুরুষ ছিলেন। কিন্তু প্রথম বিয়েটা তিনি করেছিলেন খেলা ছাড়ারও তিন বছর পর। ১৯৯৫ সালে তিনি ব্রিটিশ ধনকুবের জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমাইমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। সে বিয়ে নিয়ে কত গল্প-গাথা যে আছে! বিয়ের সেই সময়টা তেহরিক-ই-ইনসাফের ছিল হাঁটিহাঁটি পা পা অবস্থা।
তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেমাইমার ইহুদি পরিচয়কে ব্যবহার করেছিল যথেষ্ট পারঙ্গমতার সঙ্গেই। নানা সংকটের পর ২০০৪ সালে বিচ্ছেদে শেষ হয় জেমাইমার সঙ্গে ইমরানের সেই সম্পর্ক। ইমরান-জেমাইমার ঘরে আছে দুই ছেলে—সুলেমান ও কাশিম।